পদ্মার চরে বিরল ‘বাংলা বাবুই’ পাখির বাসা
সৌরভ মাহমুদ
পাখিটি এখনো আমাদের দেশের বিপন্ন পাখির তালিকায় আসেনি। অথচ বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis) দক্ষিণ এশিয়ার একটি এন্ডেমিক পাখি। এন্ডেমিক বলতে বোঝায় কোনো প্রজাতির নির্দিষ্ট কোনো ভৌগোলিক স্থানে সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়া। এ বাবুই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমাদের তিন প্রজাতির বাবুই হলো দেশি বাবুই (Ploceus philippinus), দাগি বাবুই (Ploceus manyar) ও বাংলা বাবুই। এদের মধ্যে দেশি বাবুই দেশের সব গ্রামের তাল, নারিকেল, খেজুর, রেইনট্রি গাছে দলবেঁধে বাসা বোনে। কিন্তু বাংলা ও দাগি বাবুই বিরল।
সম্প্রতি সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) হয়ে বন্য প্রাণী ও গাছপালাবিষয়ক এক গবেষণার কাজে পদ্মার একটি চরে গিয়ে দেখা গেছে এই বাসা। মাত্র একটি বাসাই ছিল। চরটিতে দেশি মেটে হাঁস, কোড়া, ধলা চিল, বিপন্ন নাকতা হাঁস, ভ্রমর ছোটন, কয়েক প্রজাতির বুশ লার্ক ও প্রিনিয়াও দেখে গেছে। গবেষক দলের প্রধান ছিলেন সিইজিআইএসের পরিবেশবিজ্ঞানী ইশতিয়াক সোবাহান।
বাংলা বাবুইয়ের বাসা করার জন্য প্রয়োজন হয় নলখাগড়া ও হোগলার বন। কিন্তু দেশে নল ও হোগলার বন কমে যাওয়ায় এই বাংলা বাবুইয়ের সংখ্যা খুবই কম। তা ছাড়া এই পাখি যেখানে বাস করে—নল ও হোগলার বনে—সেখানে মানুষের চলাচল থাকে। আর বাসা বোনে মানুষের হাতের নাগালে পাঁচ থেকে ছয় ফুট ওপরে। তাই সহজেই গ্রাম কিংবা চর এলাকার অসচেতন মানুষ এদের বাস ভেঙে ফেলে। এ কারণে অধিকাংশ বাংলা বাবুই ছানা ফুটিয়ে বড় করে তুলে নিতে পারে না।
বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, ‘বাংলা বাবুই, যার নামের শেষে বেঙ্গেলেনসিন আছে, তাই এরা বাংলারই বাবুই। তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এ পাখি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে মাত্র ১০০টি বাংলা বাবুই থাকতে পারে।’ তিনি অরও জানান, ‘২০০৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের এক গ্রামে হোগলার বনে কিছু বাসা দেখেছিলাম, কিন্তু কয়েক দিন পর গিয়ে আর একটি বাসাও দেখতে পাইনি; মানুষ ভেঙে ফেলেছে!’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান জানান, তিনি যমুনার একটি চরে ১৯৯৫ সালে বাসা ও একঝাঁক বাংলা বাবুই দেখেছিলেন।
যেহেতু এ পাখি মানুষের খুব নাগালে বাসা বোনে, তাই মানুষের সচেতনতাই পারে এ পাখির বংশ টিকিয়ে রাখতে। তা ছাড়া এ পাখির যে চরে বিচরণ আছে এবং বাসা বোনে, অন্তত সে রকম একটি চরকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা কিংবা পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। কারণ একটি প্রজাতি হারিয়ে গেল তাকে আর কোনো দিন পৃথিবীতে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়!
http://rezowan.wordpress.com
No comments:
Post a Comment