ড. এস এম এ রশীদ
পাখিশুমারি কী? কেন এই পাখিশুমারি? পাখিশুমারি করা সম্ভব কি? অনেকেই এমন প্রশ্ন করেছে। আড়ালে হাসাহাসি করেছে, তবে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আজ পাখিশুমারির দুই যুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে।
বন বিভাগের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে শীতকালীন জলচর পাখিশুমারি শুরু হয়। এর জাতীয় সমন্বয়কারী হিসেবে আবদুল ওয়াহাব আকন্দকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয় (তখন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ছিল না)। এরই অংশ হিসেবে আমি প্রথম উপকূলীয় অঞ্চলের নোয়াখালী এলাকায় শীতকালীন জলচর পাখিশুমারির কাজ শুরু করি। ওসমান গনি তখন মাইজদীতে বন বিভাগের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তিনি পাখিশুমারি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। সেই সময় হাতেগোনা দুই-একজনের কথা উল্লেখ করা যায়, যাঁরা আন্তরিকভাবে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পাখি পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যেমন ড. সোহরাব উদ্দিন সরকার, ড. আলী রেজা খান, প্রয়াত ড. নজরুল হক, ড. নূরজাহান সরকার, ড. আনিসুজ্জামান খান, রাগীব উদ্দিন আহমদ, ড. রোনাল্ড হালদারসহ আরো কয়েকজন। যারা নিয়মিত না হলেও প্রায়ই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বলতেন এবং পরামর্শ দিতেন, তাঁদের মধ্যে প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন, মরহুম জি এম এম ই করিমের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বসবাসরত কিছু বিদেশিও পাখি দেখায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। যেমন ডেভ জনসন (অ্যাডভেন্টিস্ট ডেন্টাল ক্লিনিক), বিল হারভে (ব্রিটিশ কাউন্সিল) এবং ড. পল থমসন।
শৈশব থেকেই প্রকৃতি ও এর অলংকার পাখি দেখার সঙ্গে আমি জড়িত। এর জন্য প্রশংসার দাবিদার আমার বড় ভাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন মতিন (অবসরপ্রাপ্ত)। তবে পাখি দেখার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য উপলব্ধি করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়নকালে প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন ও ড. আলী রেজা খানের কাছ থেকে। মাঠে-ঘাটে ঘোরা ও বন্য প্রাণী দেখার সেই নেশা আজ অবধি ছাড়তে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়েও এই নেশা পিছু ছাড়েনি।
১৯৮৭ সালে হাতিয়ার নলচিরা, চর ভাটা, শাহেবানি চর, ঘাসিয়ার চর, ঢাল চর, নিঝুম দ্বীপ, চর রওশন, চর বাহাউদ্দিন থেকে আমি যে পাখিশুমারি শুরু করি আজ তা কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিবছর পাখি গণনাকারীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও এখন পাখিশুমারিতে যোগ দেয়। পাখি দেখায় তাদের দক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছে জ্ঞান, সেই সঙ্গে বেড়েছে পাখি ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণের চিন্তা-ভাবনা। পাখিশুমারির ফলাফল এখন জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়।
সেই শুমারিতে প্রথম বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বহু বিরল প্রজাতির পাখির শীতকালীন আবাসস্থল হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হয়। এই শুমারির ফলে জানা যায়, আমাদের উপকূল চামচ-ঠুঁটো চাপাখির প্রধান শীতকালীন আবাসস্থল। চামুচ-ঠুঁটো চাপাখি সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে। গাং চষা পাখিরও সবচেয়ে বড় দল হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের উপকূলে বাস করে। তা ছাড়া ক্র্যাব প্লোভারের অস্তিত্বও পাওয়া যায় এখানে, যা আগে জানা ছিল না। পাখিশুমারিতে বেরিয়ে আসে এমন আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্য।
প্রথম বছরে এত মূল্যবান তথ্য পাওয়ায় পরের বছর ১৯৮৮ সালে এশিয়ান ওয়েটল্যান্ড ব্যুরো থেকে জন হোয়েজ, ডেভ বেকওয়েল ও সুজান হোয়েজ বাংলাদেশে আসেন এবং জলচর পাখির বৈচিত্র্য ও বিশাল সমারোহ দেখে মুগ্ধ হন। তাঁরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে পরিযায়ীসহ আরো জলচর পাখির জন্য পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলেশিয়া (ওশেনিয়া অঞ্চল) এবং মধ্য এশিয়াকে অভিবাসী পাখির গমনপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সেই সময় থেকেই পাখিশুমারি ও জলাভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
পরে বন বিভাগ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কিছু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মকর্তা, আইডবি্লউআরবি, ইন্টারওয়েডার এবং নেকম আলাদাভাবে রামসার কনভেনশন স্বাক্ষরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে বাংলাদেশের প্রথম রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রামসার কনভেনশন স্বাক্ষর করা হয়। পাখিশুমারি কার্যক্রমের এটি একটি বড় সাফল্য।
ইংল্যান্ডের ডারেল ইনস্টিটিউট অব কনজারভেশন অ্যান্ড ইকলোজি, ক্যান্টারবারির ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে আসি এবং নেকমের পক্ষে পাখিবিদ ড. ডেরেক স্কটের সঙ্গে যৌথভাবে ক্যানাডিয়ান সিডা-র জন্য পাখি জরিপ করি। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বেশ কিছু জলাভূমিকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার জন্য প্রস্তাব করি। এর মধ্যে আছে টাঙ্গুয়ার হাওর, গুরমার হাওর, হাকালুকি, হাইল, কাওয়াদীঘি, বালাই ও মুরালি হাওর। পরবর্তীতে নেকম ফ্লাড অ্যাকশান প্লানের আওতায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলাভূমি ও জলজসম্পদ সংরক্ষণের জরিপ করা হয়।
পাখিশুমারি বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে, আমাদের দেশে পাখির বিভিন্ন প্রজাতির তালিকায় যোগ করেছে নতুন প্রজাতি। তাদের আবাসস্থল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়িয়েছে, তাদের সংরক্ষণের জন্য জনমত ও সচেতনতা বাড়িয়েছে, সরকার ও জনগণকে পাখি সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করেছে। যাঁরা প্রথমদিকে হাসাহাসি করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন পাখিশুমারিতে যোগ দিয়েছেন।
চার বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিডাবি্লউবিএমপি-এর আওতায় প্রতি বছর পাখিশুমারি হচ্ছে। এখন শৌখিন পাখি পর্যবেক্ষকরাও নিয়মিত পাখি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছেন। তাঁরা পাহাড়, বন, চর, জলাভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পাখি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাচ্ছেন। পাখি ও বন্য প্রাণী নিয়ে সরকারের কর্মপরিধিও বেড়েছে। ফলে দেশে বাড়ছে বন্য প্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকা। পাখি সংরক্ষণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি করিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অবদান রাখা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। আর এর খাতিরে পাখিশুমারির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও শৌখিন পর্যবেক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা করা বাঞ্ছনীয়। সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর পরিকল্পনামাফিক এ কাজটি পরিচালনার জন্য সরকারের বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত।
আমি মনে করি, এ কাজের যথোপযুক্ত সরকারি সংস্থা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বাৎসরিক বাজেটে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ ও শৌখিন পর্যবেক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপাতত ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।
লেখক : নির্বাহী প্রধান, সেন্টার ফর অ্যাড্ভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ক্যারিনাম)
Source: Dailykalerkantho
বন বিভাগের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে শীতকালীন জলচর পাখিশুমারি শুরু হয়। এর জাতীয় সমন্বয়কারী হিসেবে আবদুল ওয়াহাব আকন্দকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয় (তখন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ছিল না)। এরই অংশ হিসেবে আমি প্রথম উপকূলীয় অঞ্চলের নোয়াখালী এলাকায় শীতকালীন জলচর পাখিশুমারির কাজ শুরু করি। ওসমান গনি তখন মাইজদীতে বন বিভাগের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তিনি পাখিশুমারি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। সেই সময় হাতেগোনা দুই-একজনের কথা উল্লেখ করা যায়, যাঁরা আন্তরিকভাবে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পাখি পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যেমন ড. সোহরাব উদ্দিন সরকার, ড. আলী রেজা খান, প্রয়াত ড. নজরুল হক, ড. নূরজাহান সরকার, ড. আনিসুজ্জামান খান, রাগীব উদ্দিন আহমদ, ড. রোনাল্ড হালদারসহ আরো কয়েকজন। যারা নিয়মিত না হলেও প্রায়ই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বলতেন এবং পরামর্শ দিতেন, তাঁদের মধ্যে প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন, মরহুম জি এম এম ই করিমের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বসবাসরত কিছু বিদেশিও পাখি দেখায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। যেমন ডেভ জনসন (অ্যাডভেন্টিস্ট ডেন্টাল ক্লিনিক), বিল হারভে (ব্রিটিশ কাউন্সিল) এবং ড. পল থমসন।
শৈশব থেকেই প্রকৃতি ও এর অলংকার পাখি দেখার সঙ্গে আমি জড়িত। এর জন্য প্রশংসার দাবিদার আমার বড় ভাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন মতিন (অবসরপ্রাপ্ত)। তবে পাখি দেখার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য উপলব্ধি করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়নকালে প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন ও ড. আলী রেজা খানের কাছ থেকে। মাঠে-ঘাটে ঘোরা ও বন্য প্রাণী দেখার সেই নেশা আজ অবধি ছাড়তে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়েও এই নেশা পিছু ছাড়েনি।
১৯৮৭ সালে হাতিয়ার নলচিরা, চর ভাটা, শাহেবানি চর, ঘাসিয়ার চর, ঢাল চর, নিঝুম দ্বীপ, চর রওশন, চর বাহাউদ্দিন থেকে আমি যে পাখিশুমারি শুরু করি আজ তা কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিবছর পাখি গণনাকারীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও এখন পাখিশুমারিতে যোগ দেয়। পাখি দেখায় তাদের দক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছে জ্ঞান, সেই সঙ্গে বেড়েছে পাখি ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণের চিন্তা-ভাবনা। পাখিশুমারির ফলাফল এখন জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়।
সেই শুমারিতে প্রথম বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বহু বিরল প্রজাতির পাখির শীতকালীন আবাসস্থল হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হয়। এই শুমারির ফলে জানা যায়, আমাদের উপকূল চামচ-ঠুঁটো চাপাখির প্রধান শীতকালীন আবাসস্থল। চামুচ-ঠুঁটো চাপাখি সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে। গাং চষা পাখিরও সবচেয়ে বড় দল হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের উপকূলে বাস করে। তা ছাড়া ক্র্যাব প্লোভারের অস্তিত্বও পাওয়া যায় এখানে, যা আগে জানা ছিল না। পাখিশুমারিতে বেরিয়ে আসে এমন আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্য।
প্রথম বছরে এত মূল্যবান তথ্য পাওয়ায় পরের বছর ১৯৮৮ সালে এশিয়ান ওয়েটল্যান্ড ব্যুরো থেকে জন হোয়েজ, ডেভ বেকওয়েল ও সুজান হোয়েজ বাংলাদেশে আসেন এবং জলচর পাখির বৈচিত্র্য ও বিশাল সমারোহ দেখে মুগ্ধ হন। তাঁরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে পরিযায়ীসহ আরো জলচর পাখির জন্য পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলেশিয়া (ওশেনিয়া অঞ্চল) এবং মধ্য এশিয়াকে অভিবাসী পাখির গমনপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সেই সময় থেকেই পাখিশুমারি ও জলাভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
পরে বন বিভাগ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কিছু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মকর্তা, আইডবি্লউআরবি, ইন্টারওয়েডার এবং নেকম আলাদাভাবে রামসার কনভেনশন স্বাক্ষরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে বাংলাদেশের প্রথম রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রামসার কনভেনশন স্বাক্ষর করা হয়। পাখিশুমারি কার্যক্রমের এটি একটি বড় সাফল্য।
ইংল্যান্ডের ডারেল ইনস্টিটিউট অব কনজারভেশন অ্যান্ড ইকলোজি, ক্যান্টারবারির ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে আসি এবং নেকমের পক্ষে পাখিবিদ ড. ডেরেক স্কটের সঙ্গে যৌথভাবে ক্যানাডিয়ান সিডা-র জন্য পাখি জরিপ করি। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বেশ কিছু জলাভূমিকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার জন্য প্রস্তাব করি। এর মধ্যে আছে টাঙ্গুয়ার হাওর, গুরমার হাওর, হাকালুকি, হাইল, কাওয়াদীঘি, বালাই ও মুরালি হাওর। পরবর্তীতে নেকম ফ্লাড অ্যাকশান প্লানের আওতায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলাভূমি ও জলজসম্পদ সংরক্ষণের জরিপ করা হয়।
পাখিশুমারি বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে, আমাদের দেশে পাখির বিভিন্ন প্রজাতির তালিকায় যোগ করেছে নতুন প্রজাতি। তাদের আবাসস্থল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়িয়েছে, তাদের সংরক্ষণের জন্য জনমত ও সচেতনতা বাড়িয়েছে, সরকার ও জনগণকে পাখি সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করেছে। যাঁরা প্রথমদিকে হাসাহাসি করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন পাখিশুমারিতে যোগ দিয়েছেন।
চার বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিডাবি্লউবিএমপি-এর আওতায় প্রতি বছর পাখিশুমারি হচ্ছে। এখন শৌখিন পাখি পর্যবেক্ষকরাও নিয়মিত পাখি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছেন। তাঁরা পাহাড়, বন, চর, জলাভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পাখি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাচ্ছেন। পাখি ও বন্য প্রাণী নিয়ে সরকারের কর্মপরিধিও বেড়েছে। ফলে দেশে বাড়ছে বন্য প্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকা। পাখি সংরক্ষণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি করিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অবদান রাখা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। আর এর খাতিরে পাখিশুমারির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও শৌখিন পর্যবেক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা করা বাঞ্ছনীয়। সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর পরিকল্পনামাফিক এ কাজটি পরিচালনার জন্য সরকারের বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত।
আমি মনে করি, এ কাজের যথোপযুক্ত সরকারি সংস্থা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বাৎসরিক বাজেটে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ ও শৌখিন পর্যবেক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপাতত ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।
লেখক : নির্বাহী প্রধান, সেন্টার ফর অ্যাড্ভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ক্যারিনাম)
Source: Dailykalerkantho
No comments:
Post a Comment