Friday, January 22, 2010

পাখির অভয়ারণ্য হচ্ছে ফয়'স লেক

পাখির অভয়ারণ্য হচ্ছে ফয়'স লেক চট্টগ্রাম অফিস
চট্টগ্রামের নয়নাভিরাম ফয়'স লেক এলাকায় অবস্থিত চিড়িয়াখানার ভেতরের একটি পাহাড়ে গড়ে তোলা হবে পাখির অভায়রণ্য। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তায় এই অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হচ্ছে।
পাহাড় অটুট রেখে কিভাবে এই অভয়ারণ্য গড়ে তোলা যায় তার নকশা তৈরির কাজ চলছে। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের অন্যতম ডিজাইনার স্থপতি মঞ্জুরুল কাদেরকে। স্থপতি মঞ্জুরুল কাদের বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুরোধে বিনাপারিশ্রমিকে তিনি অভয়ারণ্যের নকশা তৈরি করছেন। তিনি জানান, পাখির এই অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে খরচ হবে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা।
চিড়িয়াখানা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বৈঠকে চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে সহায়তার জন্য শিল্পপতিদের কাছে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানানো হয়। এরপর যেসব শিল্পপতি আগ্রহ দেখান তাঁদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানার তহবিলে ৮৮ লাখ টাকা জমা রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এ প্রসঙ্গে চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, 'আমরা চিড়িয়াখানাকে আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা হয়ে উঠবে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।'
চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, চিড়িয়াখানার উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরীণ সব রাস্তা মেরামত করে দিচ্ছে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বসানো হচ্ছে গভীর নলকূপ, এলিট পেইন্টের পক্ষে দেওয়া হচ্ছে খাঁচাকে রাঙিয়ে তোলার কাজে ব্যবহৃত রঙ। এছাড়া জিপিএইচ ইস্পাত কোম্পানি কুমিরের জন্য একটি নতুন খাঁচা করে দিচ্ছে।
পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলা প্রসঙ্গে চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. এম মোর্শেদ চৌধুরী জানান, বর্তমানে চিড়িয়াখানার ভেতরে বিশাল যে পাহাড়টি রয়েছে তা তেমন কোনো কাজে আসে না। তাই পাহাড়ের সীমানা ঘেঁষে গাছগুলোর সমান খাঁচা তৈরি করা হবে পাখিদের আবাস হিসেবে। আর পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে থাকবে পর্যটকদের বসার জন্য ছোট ছোট টুল।
Source:Dailykalerkantho
২৩ জানুয়ারি ২০১০

Sunday, January 3, 2010

বিলুপ্ত : পাখি আর ডাকে না

বিলুপ্ত : পাখি আর ডাকে না

একটা সময় গেছে- প্রতিবছরই শীতকালে (১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত) সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওর-বিলে যেতাম পাখি দেখতে। এখন আর কিন্তু যাওয়া হয় না। বিশেষ করে ঐদিনগুলোতে রঘুনন্দন পাহাড়ের আশেপাশে বেড়ানোটা ছিল বেশ আনন্দের। ঐদিনগুলোতে বনে-বাদাড়ে, হাওর-বিলে, জলাভূমিতে কত না প্রজাতির পাখি দেখেছি-তার হিসেবে এতোদিনে অনেকটাই ভুলে গ্যাছি। একবারের কথা বেশ করে এখনও মনে পড়ে। সেবারতো অন্তত দেড়শো প্রজাতির পাখি গুণতে সক্ষম হয়েছিলাম। যারা আজকাল বিল-হাওরে যান তারাই বলেন, পাখির দেখাতো তেমন একটা পেলাম না। হঠাৎ হঠাৎ পাখি দেখি। মনে হয় ওরা যেনো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

শীতের সময় হাওর, বনাঞ্চলে, পাহাড়ে, জলাভূমিতে যে সব পাখি দেখা যায় এদের একটা বড় অংশই হলো শীত যাপন করতে আসা বিদেশি পাখির দল। কিন্তু আজকাল বাংলার কোথাও ঘুরে এতোগুলো প্রজাতির পাখি দেখার কথা কেউই ভাবতে পারেন না। পারবেনই বা কেন? আমাদের বাংলাদেশে পাখি দেখার জন্য ক’টাইবা পার্ক অথবা পাখি অভয়ারণ্য রয়েছে। ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ছাড়াও কয়েকটি অভয়ারণ্য থাকলেও ঐসব জায়গায় হাতে গোনা কয়েক প্রজাতির পাখিই দেখা যায় মাত্র। সংরক্ষণের অভাবেই কিন্তু ঐসব অভয়ারণ্য থেকে পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি পাখির অভয়ারণ্য এলাকা দেখে এতোই মুগ্ধ হয়েলিাম-সে কথা কোনদিনই যে ভোলা যাবে না। একবারতো আগ্রা-জয়পুর বেড়াতে গিয়ে ভরতপুর পাখির অভয়ারণ্যে গিয়ে অবাক। ৩০ বর্গ কিমির জলাভূমি ও জঙ্গল নিয়ে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। ১৯৯০ সালে এখানে গিয়ে দেখলাম, পাখি চিনিয়ে দেয়ার জন্য গাইডও পাওয়া যায়। তিনি আমাকে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রজাতি পাখি দেখিয়েছিলেন। এখানে বনে ঢোকবার জন্য আলাদা টিকিটও কাটতে হয়। শীতের সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা বনে ঢুকতে প্রথমটায় গা ছমছম করেছিল। এখানের জলাগুলির মধ্যে বিভাজন রেখা টেনেছে ইটে বাঁধানো সরু সরু রাস্তা। গাছে, জলায়, ঝোপে যেনো পাখির মেলা বসে যায়। এমনটি দেখে তখন বার বার মনে পড়ছিল অতীত দিনের কথা। ১৯৫৮-৬০ সালে আমাদের ছোট্ট শহর পিরোজপুরে ঘুম ভাংগতো পাখির ডাকে। পাপিয়া, বুলবুলি পাখি দেখে আমরাও গাইতাম-‘ফুল ফুটানো গান গেয়ে যায় পাপিয়া বুলবুল গোঃ’। এ গান তো গেয়েছিলেন কানন দেবী। রেকর্ডে তার গান শুনে শুনে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে দেখতাম কত না পাখি। ইদানীং পিরোজপুর গিয়ে পাখিদের দেখাতো আর পেলাম না। তখন প্রশ্ন জেগেছিল, টিয়া, ময়না, বুলবুলি, পাপিয়া, তোতা, ময়ূর, পেঁচা, ঘুঘু ওরা কি চিরতরে হারিয়ে গেলো!

এই তো ৪৫ বছর আগে যখন গাবখান নদী দিয়ে ছোট লঞ্চে বসে শেখেরহাটে আসতাম তখন ঘুঘুর ডাক শুনে ছুটে যেতে মন চাইতো জুলুহারের দিকে। এই জুলুহার স্কুল থেকেই আমার বাবা আমির হোসেন মিয়া ১৯২৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। বাবার মুখেই শুনেছি, নদী পেরিয়ে গাঁয়ের পথ ধরে হাঁটতেই দু’ধারে দেখা যেতো টিয়া, ময়না, ঘুঘু, পাপিয়া, বউ কথা কও, ডাহুক, পেঁচা পাখিদের অবাধ বিচরণ। ময়ূরও নাকি ছিলো। সেই জুলুহারে ক’দিন আগে গিয়ে একটি পাখিও চোখে পড়লো না। সময়ে কি না হয়ে গেলো। তখন বার বার মনে হলো-কবির লেখা ঃ ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এ চরণটি কি আজ মিথ্যে হয়ে গেলো!

আমাদের এই বাংলাদেশে হাওর বিলের তো অভাব নেই। এসব জায়গার আশেপাশে গাছ-পালা তো কম নেই। বন এলাকাও তো বিক্ষিপ্তভাবে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে। তারপরেও পাখিদের বিচরণ এতোটা কম কেন? এ প্রশ্ন জাগা কিন্তু তাই অবান্তর নয়! দেশের হাওর-বিল এলাকায় পাখির অভয়ারণ্য করার কথা-সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তখনই ভেবে দেখতে হবে। নচেৎ আগামী প্রজন্ম স্বচক্ষে পাখি দেখার সুযোগ থেকে যে বঞ্চিত হবে।

-লিয়াকত হোসেন খোকন
দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারি, ২, ২০০৮

Saturday, January 2, 2010

পাখির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়

পাখির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়
কু নত্ম ল রা য়, ৩ জানুয়ারী ২০১০

পাখি। দৈহিক গঠন, রঙ, বৈচিত্র্য এবং আকাশে ওড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন নান্দনিক সৃষ্টি। পাখি দেখেই জেগেছে আকাশে ওড়ার প্রেরণা। প্রাচীনকাল থেকেই পাখির প্রতি আগ্রহ। পৌরাণিক কাহিনী, শিলালিপি, ভাস্কর্য সবখানেই পাখি ছিল। পাখি নিয়ে অনেক মিথও তৈরি হয়েছে। মিসরীয়রা পাখিকে দেবতা ভাবত। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার পাখির প্রতি মানুষের কৌতূহল যেমন বাড়িয়েছে তেমনি প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার বাড়তি দায়িত্বও দিয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্যাম্পাসকে পাখির অভয়ারণ্য বললে ভুল হবে না। পাখিদের রয়েছে ২৭টি বর্গ, ১৫৫টি গোত্র এবং প্রায় ৯০০০ প্রজাতি। বাংলাদেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৭০০। এর মাঝে ৩৬০টি স্থায়ী এবং ৩৪০টি পরিযায়ী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানীয় ও পরিযায়ী মিলিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। পাখি প্রজাতির এ সংখ্যাই জানিয়ে দেয় এ ক্যাম্পাস পাখির কত প্রিয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ক্যাম্পাসে বাড়ছে পাখি প্রজাতির সংখ্যা। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট না হলে এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মনে করেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় পাখি

ক্যাম্পাসে যেসব পাখি সারা বছরই থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে সরালী, কাঠ্ঠোকরা, ছোট বসনত্ম বাউরী, হুদহুদ, নীলকণ্ঠ, মাছরাঙ্গার চারটি প্রজাতি, সুঁইচোরা, চাতক, কুক্কা, কানাকুয়া, পাপিয়া, বউ কথা কও, কোকিল, টিয়া, আবাবিল, চোখগেল, নাক্কাটি, পেঁচার চারটি প্রজাতি, রাতচরা, ঘুঘুর চারটি প্রজাতি, কবুতর, ডাহুক, তিন প্রজাতির চিল, বাজপাখি, পানকৌড়ি, প্রায় আট প্রজাতির বক, শামুকভাঙ্গা, হাড়িচাচা, পটিকজল, হলদে পাখি, ফিঙ্গে, লাটোরা, গুদহুকা, সাত সাইলি, কাঠকসাই, দোয়েল, ছয় প্রজাতির শালিক, কমলামাথা পাঙ্গা, বুলবুলি, নীলটুনি, মৌটুসি, ফুলঝুরি, মুনিয়া, বাবুই প্রভৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণায় জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে সারাদেশের তুলনায় ক্যাম্পাসে পাখি প্রজাতির সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৮৮ সালে যেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যেত মাত্র ৮১ প্রজাতির পাখি, বর্তমানে সেখানে পাখি প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১৫০-এ এসে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৩০ প্রজাতির পাখি পরিযায়ী, বাদবাকি সব প্রজাতিই স্থানীয়। স্থানীয় পাখিদের মধ্যে প্রায় ৭০ প্রজাতির পাখি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বংশবৃদ্ধি করে। যেখানে সারা দেশেই পাখির প্রজাতি কমছে, ক্যাম্পাসে ঘটছে ঠিক বিপরীত ঘটনা। এর কারণ হলো সারাদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশ যেভাবে বিনষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পরিবেশ সে তুলনায় অনেক বেশি সংরক্ষিত ও পাখিদের জন্য বন্ধুভাবাপন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাথর্ী ও আবাসিক জনসাধারণের পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণিপ্রজাতির প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব, অকারণে পাখিদের আবাসস্থল বিনষ্ট না করা প্রভৃতি কারণে ক্যাম্পাস পরিবেশ বিভিন্ন পাখি ও প্রাণিপ্রজাতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জনসচেতনতামূলক তৎপরতায় গত বিশ বছর ধরে এখানে পাখি প্রজাতি তো কমেইনি, বরং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন।
অতিথি পাখি

বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকাল এলেই অতিথি পাখি দেখার জন্য ঢাকা এবং আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে দর্শনাথর্ীরা এসে ভিড় জমায়। প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে লেকের পাড়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন এলাকার পাশের জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়। যদিও ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে হাঁস বা জলে চরা পাখিদের তুলনায় গাছেচরা পরিযায়ীর সংখ্যা বেশি। শীতকালে ক্যাম্পাসে লেঞ্জা হাঁস, নীলপাখা হাঁস, দুই প্রজাতির ভূতি হাঁস, বালি হাঁস, নাখতা হাঁস, কাঁদাখোচা প্রভৃতি জলে চরা পাখি ক্যাম্পাসের প্রধান দু'টি জলাশয় দখল করে। আর মেঠো কাঠঠোকরা, কুক্কু, বনছাহা, বাটান, জিরিয়া, খয়েরি ঈগল, মেঠোচিল, বাদামি কসাই পাখি, ধূসর ফিঙে, লালবুক চটক, নীল পাঙ্গা, কাল গিরি, আবাবিল, টিকরা, মুছাছি, খঞ্জন, লাল কণ্ঠ, মাছমুরাল বা অসপ্রে, কেস্ট্রেল বা বাজপাখি আশ্রয় নেয় ক্যাম্পাসের অসংখ্য ছোট-বড় গাছ, বাঁশঝাড় এবং ছোট ঝোপ-জঙ্গলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিবছরই জলেচরা অতিথি বা পরিযায়ী পাখিদের শুমারি করে। শুমারির গণনা অনুযায়ী বছরে ক্যাম্পাসে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার অতিথি পাখি আসে। তবে শীতের তীব্রতা এবং জলাশয়ের পরিবেশের ওপর পাখির সংখ্যা বছরপ্রতি ওঠানামা করে। এছাড়া অনেক পাখি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশর্্ববর্তী বিএলআরআই (বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এর লেকে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তবে ক্যাম্পাসে যেসব অতিথি পাখি আসে তাদের অধিকাংশই স্থানীয় পরিযায়ী। স্থানীয় পরিযায়ীরা ভিন্ন দেশ থেকে নয় বরং বাংলাদেশেরই আরেক প্রানত্ম যেমন সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাকালুকি বা হাইল হাওড়, কঙ্বাজার, সেন্টমার্টিন, ভোলা, সন্দ্বীপসহ উপকূলীয় এলাকা থেকে আসে। মাত্র এক থেকে দুইটি প্রজাতি সাইবেরিয়ান অঞ্চল থেকে এখানে আসে।

বিপন্ন পাখি

সারাদেশে বিপন্ন এমন কিছু পাখি প্রজাতিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চিনত্মে বসবাস করতে দেখা যায়। জলপিপি, কালিম ও ডাহুক পাখি ক্যাম্পাসে পাওয়া যাবে, বাইরে যাদের সংখ্যা ক্রমাগতই কমছে। ভুতুম পেঁচা বা ব্রাউন ফিস আউল সারাদেশে আবাস্থল ধ্বংসের কারণে আশঙ্কাজনকহারে কমলেও ক্যাম্পাসে এরা নিরাপদেই টিকে আছে। সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন গাছের খোড়লে এদের 'হু হু হুতুমমম...' ডাক শোনা যায়। প্রতিবছর এরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন সংলগ্ন বাঁশঝাড়ে বাসা তৈরি করে। এছাডা শীতকালে ক্যাম্পাসে এসে আশ্রয় নেয় বোঁচা হাঁস এবং সাপ পাখি। আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার)-এর বাংলাদেশের বিপন্ন পাখিপ্রজাতির তালিকায় উপরোক্ত তিনটি পাখিই অনত্মর্ভুক্ত। এছাড়াও ক্যাম্পাসে নিমপোখ (কলারড স্কোপস আউল), মাছরাঙ্গা, শামুক ভাঙ্গা, হলুদ লতিকা হট-টি-টি, রঙ্গিলা চ্যাগা, ধূসরমাথা কুড়া ঈগল পাওয়া যায়। পেঁচার আরেকটি প্রজাতি নিম পেঁচাও এখানে দেখতে পাওয়া যায়। মাত্র তিন বছর আগে দামা বা পেস্নইন ব্যাকড থ্রাশ নামের একটি পাখি বাংলাদেশে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এর আগে দেশের কোথাও এই প্রজাতিটি দেখা যায়নি বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন। শকুন দেখতে খুব ভাল না লাগলেও আগে সারাদেশেই শকুন পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে এটি একটি বিরল পাখি প্রজাতি। মাত্র দশ বছর আগেও ক্যাম্পাসে শকুন দেখা যেত। কিন্তু এখন আর এই পাখিটিকে দেখা যায় না।

পাখি মেলা, পাখি দেখা

প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় পাখিমেলা। সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রম্নয়ারি বা মার্চের শুরম্নতে যখন সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি আসে তখনই পাখিমেলা অনুষ্ঠিত হয়। মূলত পাখিমেলার উদ্দেশ্য পাখি দেখা হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে পাখিদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি, পাখির প্রতি মানুষের ভালবাসা সৃষ্টি করা এবং প্রকৃতির এই নিষ্পাপ সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য একধরনের গণআন্দোলন তৈরি করা। পাখিমেলায় দর্শনাথর্ীরা টেলিস্কোপের মাধ্যমে পাখি দেখতে পারেন, অংশগ্রহণ করতে পারেন পাখিবিষয়ক কুইজ বা ছবি অাঁকা প্রতিযোগিতায়। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান পাখিমেলা আয়োজনের প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে সহযোগিতা করে। এছাড়া পাখিমেলার সময়ই পাখিশুমারি করা হয়, পাখিবিষয়ক গবেষণায় যা গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞের মতামত

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রাণিবিজ্ঞানী ড. এম মনিরম্নল এইচ খান ক্যাম্পাসে পাখি প্রজাতির সংখ্যা এবং তাদের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অতিথি পাখিদের জন্যও জলাশয়ের পরিবেশ বন্ধুভাবাপন্ন বলে তিনি মনত্মব্য করেন। বিগত কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পাসে প্রধান দু'টি জলাশয় মাছ চাষের জন্য লিজ দেয়া হচ্ছে না, যেটি প্রশাসনের একটি ভাল পদক্ষেপ বলে তিনি মনে করেন। তবে এই লেক দু'টিতে দুই বা তিন বছর পর পর খনন প্রয়োজন, নয়ত তলানি জমে লেকগুলো ভরাট হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ক্যাম্পাসের স্থায়ী পাখি প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার পদক্ষেপ হিসেবে কিছু কিছু স্থানে কোন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ঠিক হবে না উলেস্নখ করে প্রাণিবিজ্ঞানী মনিরম্নল এইচ খান জনকণ্ঠকে বলেন, পরিসংখ্যান ভবনের উত্তর দিক, প্রশাসনিক ভবন ও বিজ্ঞান কারখানার পূর্ব দিক, জিমনেসিয়াম ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের ঝোপ-জঙ্গল এসব পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। ফলে এসব জায়গা অপরিবর্তিত রাখা অত্যনত জরম্নরী।
Source: Dailyjanakantha

Watch this Video: