Thursday, September 30, 2010

শীতের পাখি

শীতের পাখি
শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে উড়ে আসা হাজারো অতিথি পাখির কলতানে মুখর বাংলার প্রকৃতি। অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ রঙবেরঙের শীতের পাখির কিচিরমিচির চলে পুরোটা শীতকাল জুড়েই। অতিথি পাখির সাতকাহন থাকছে এ প্রতিবেদনে
শামুকখোল
ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যের এ দেশে এখন শীতকাল। সকালে ঘাসের ডগায় রুপার শিশিরকণা হালকা বাতাসে তিরতির করে কাঁপতে শুরু করেছে। শহর ছেড়ে একটু গ্রামের দিকে চোখ মেললেই দেখা মিলছে হলুদ প্রান্তর। সরিষার ফুল ফুটছে আর কুয়াশার দেখা মিলছে শহরে বসেই। সূর্য উঠছে বেশ বেলা করে। বেড়েছে পাখি। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আবাবিল পাখি গোত্তা খেয়ে উড়ছে শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলোতে। পরিযায়ী পাখিগুলোও এসে বসতে শুরু করেছে গাছের ডালে আর জলমগ্ন এলাকায়। আমাদের দেশে মোট ৬৫৩ প্রজাতির পাখি আজ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০০ জাতের পাখি পুরো বছর বাংলাদেশে থাকতে পারে না। খাবারের খোঁজে, নিরাপদে বংশবিস্তারের জন্য তাদের এই ভ্রমণ। যে পাখি গাছের পাতার ফাঁকে থাকা পোকা খায়, তাদের জন্য বাংলার শীতকালটা অনেকটা দুর্ভিক্ষের মতো। তারা আরও দক্ষিণে চলে যায় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার খোঁজে। আবার ঠিক ওই সময়টাতে সাইবেরিয়া, তিব্বতের মতো হিমশীতল এলাকার পাখিগুলো দক্ষিণে আরও সরে আসে। ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমারের মতো দেশের জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। তারা এই ভ্রমণ করছে কয়েক লাখ বছর ধরে। তাই অনেকেই এদের অতিথি পাখি না বলে পরিযায়ী পাখি বলেন। বাংলা ভূখণ্ডে মানুষের বসতির ইতিহাস পাখির পরিভ্রমণের চেয়ে অনেকটাই নতুন, মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে বাংলায় মানুষের বসতি। তাই বরং বাংলার এ ভূখণ্ডে আমরাই অতিথি।
বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি মানেই পানিতে এসে বসা ২৫ প্রজাতির হাঁসকে বোঝানো হয়। মেটে রাজহাঁস, রাজহাঁস, মার্গেঞ্জার, নাকটা হাঁস, চখাচখি, রাজমণি হাঁস, বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, পাতারি হাঁস, ফুলুরি হাঁস, পিয়ং হাঁস, গিরিয়া হাঁস, সিথি হাঁস, নীল শির হাঁস, মান্ডারিন হাঁস, লালঝুটি ভূতি হাঁস, পাতি ভূতি হাঁস, মরচে রঙ ভূতি হাঁস, বিয়ারের ভূতি হাঁস, টিকি হাঁসসহ আরও চার প্রজাতির হাঁস। হাঁস দেখতে বেশ বড়, শীতে সংকীর্ণ হয়ে থাকা জলাশয়ে বসে, ফলে এক সঙ্গে অনেকগুলো পাখি দেখা যায়। তাই আমাদের মনে গেঁথে রয়েছে অতিথি পাখি মানেই হাঁস। অথচ ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় ঘুড়ির মতো গোত্তা খাওয়া আবাবিল পাখিটাও কিন্তু পরিযায়ী। সেপ্টেম্বরের শুরুতে এরা ডেরা বাঁধতে থাকে বাংলাদেশে। ছোট পাখির দলে শুধু এরাই নয়, আরও প্রচুর পাখি রয়েছে খোদ ঢাকা শহরে, যারা শীতে আশ্রয় নিয়েছে বড় বড় গাছে। এই গাছের পাখিগুলোর তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফ্লাইক্যাচার [চুটকি], বিভিন্ন প্রজাতির ওয়ার্বলার [ফুটকি] আর থ্রাশ [দামা]। হলদে পেট ফুটকি, সবুজ চান্দি ফুটকি, বাচাল নীল ফুটকি, নীলশীষ দামা, কমলা দামা, বিভিন্ন প্রজাতির খঞ্জন আর চুটকিসহ আরও প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি। পাখিগুলোকে একটু মনোযোগ দিয়ে খুঁজলে পেয়ে যাবেন গাছপালা ভরপুর এলাকায়। এরপর বলা যেতে পারে চখাচখির কথা। বাংলাদেশের কবিদের কবিতায় বারবার চলে আসে এই পাখিটির নাম। অথচ এই পাখিও কিন্তু পরিযায়ী। মাত্র ২-৩ মাস এরা প্রজনন ঋতুতে তিব্বতে থাকে, ৬-৭ মাস বাংলাদেশে আর বাকিটা সময় পথে। হাঁস আর ছোট পাখির দলকে বাদ দিলে আরও একটি দল বাংলাদেশে আসে_ সৈকত পাখির দল। বাটান ও জিরিয়া পরিবারের এই পাখিগুলো নদীর ধারে, সমুদ্রের ধারে কাদায় থাকা পোকামাকড় খায় বলেই এই নাম। এই দলে রয়েছে ৬০ জাতের পাখি। হাঁসের চেয়ে আকারে ছোট। তবুও বেশ সহজেই চোখে পড়ে। গুলিন্দা, জৌরালি এই দলের পাখি। এই পাখিগুলোকে বেশি পাওয়া যায় উপকূলীয় অঞ্চলে। বেলনের গুরগুরি, কুট, ছোট শিলাবাটান, বড় শিলাবাটান, ঢেঙ্গা, লাল ঢেঙ্গা, বড়বাবু বাটান, মেটে মাথা তিতি, বড়ঢুল জিরিয়া, ছোটঢুল জিরিয়া, চোটনথ জিরিয়া, কেন্টিস জিরিয়া, কালো লেজ জৌরালি, ডোরালেজ জৌরালি, বড় গুলিন্দা, ছোট গুলিন্দা, লাল-পা, টিলা লাল-পাসহ আরও প্রচুর পাখি রয়েছে এই দলে। এছাড়া শিকারি পাখির একটি দলও রয়েছে। বাজ, ঈগলের বেশ বড় একটি দল শীতকালে এই দেশে কাটায়। আর শামুকখোলের মতো বড় পাখিগুলোকে জলাশয়ের ধারে বেশ সহজেই চোখে পড়ে।
আমাদের দেশে ১২ রকম মাছরাঙা রয়েছে, যেখানে পুরো আমেরিকা মহাদেশে রয়েছে মাত্র এক প্রজাতির! আমাদের দেশ প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে কতটা সমৃদ্ধ- এবার ভেবে দেখুন। কেউ কেউ অনেক সময় বলেছেন, আমরা নিজেরা খেতে পারি না, পাখিদের কী খেতে দেব? পাখি কিন্তু মানুষের খাবার খায় না, ধান খায় এমন পাখি কমই আছে। মুনিয়া আমাদের দেশি পাখি, তারা ধান খায়, তাও এত ছোট্ট পাখির জন্য যদি দুর্ভিক্ষ নেমে আসত তবে আরও আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা তার শিকার হতেন। কারণ পাখি এখনকার চেয়ে আরও ১০ গুণ ছিল কয়েক দশক আগেও। ওরা কোনো ক্ষতি করে না, যেমন হাঁসগুলো পানিতে থাকে; কিন্তু মাছ খায় না। এক জাতের পাখি হয়তো আছে মার্গেঞ্জল, যা মাছ খেত। কিন্তু মার্গেঞ্জল গত ৩০ বছরে আমরা মাত্র একটি দেখেছি। ফলে মাছ খায় এমন হাঁস নেই কিন্তু। অনেকে ভাবেন হাঁস পানিতে থাকে, তাই মাছ খায়_ পাখির চ্যাপ্টা ঠোঁট দেখেই বোঝা যায় সে মাছ খেতে অক্ষম। মাছ খাওয়া পাখির ঠোঁট হয় সরু বল্লমের মতো। যেমন বক। আবার বড়শির মতো বাঁকানো হতে পারে, যেমন পানকৌড়ি। মাছ ধরতে বড়শি বা বল্লমের প্রয়োজন, চ্যাপ্টা ঠোঁট দিয়ে মাছ ধরা সম্ভব নয়। পাখির সঙ্গে যে মানুষের বিরোধ নেই তা আমাদের পূর্বপুরুষরা ভালোই জানতেন। যে পানিতে পাখি আছে সে পানিতে মাছ আছে। কারণ পাখির যে বিষ্ঠা সেটা নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ। ফলে পানিতে যখন এটা পড়ে তখন পানি উর্বর হতে থাকে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে লতাগুল্ম গজানোর ব্যবস্থা করে দেয়। একটি হাওরে এক লাখ পাখিও যদি নামে, প্রতিদিন ২০ গ্রাম করে মল ত্যাগ করলেও প্রতিদিন সেখানে এক টন নাইট্রোজেন সার জমা হচ্ছে। সরকার বা আমরা কি কোনো হাওরে গিয়ে সার দেই? বনে যে পাখি আছে, তা প্রতিদিন জঙ্গলের ৯০ ভাগ পোকা খেয়ে ফেলছে। এই প্রক্রিয়ায় যেমন পাখি বাঁচছে নিজে, জঙ্গলকেও রক্ষা করছে। যারা এটা জানে না, দেখতে পায় না, তারাই পাখিদের বিরুদ্ধে কথা বলে। পাখি ছাড়া আমাদের মোটেও চলবে না। এ জন্যই একথাগুলো মানুষের কাছে যাওয়া জরুরি। আর আমাদেরও জরুরি পাখির কাছে যাওয়া, তাদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া। তাই ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার ভেতরে মিরপুর চিড়িয়াখানা লেক, সিরামিক লেক, পিলখানার বিজিবি লেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আরো ভালো করে দেখতে চাইলে ডালপালা খুঁজে দেখুন, নতুন কোনো না কোনো বাহারি ছোট পাখি আপনার নজরে আসবেই।

লেখা ও ছবি : আল মারুফ
কৃতজ্ঞতা : ইনাম আল হক

Source: Daily samakal, 25th january-2011

Monday, September 27, 2010

বন্যপ্রাণী : মাইগরেটরী বা পরিযায়ী পাখিদের অতিথি পাখি বা শীতের পাখি বলা একটি মারাত্বক ও ভয়ঙ্কর ভুল !!

বন্যপ্রাণী : মাইগরেটরী বা পরিযায়ী পাখিদের অতিথি পাখি বা শীতের পাখি বলা একটি মারাত্বক ও ভয়ঙ্কর ভুল !!



আমাদের দেশে প্রচুর মাইগরেটরী বা পরিযায়ী পাখি আসে তাদেরকে আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ এমনকি টেলিভিশন, খবরের কাগজেও অতিথি পাখি, শীতের পাখি, বিদেশী পাখি ইত্যাদি বলে অপ্রচার করে। কিছু কিছু মানুষ না বুঝে তাদেরকে এই ভয়ঙ্কর নামে ডেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।

ক্ষতিকর প্রভাব
স্থানীয় লোকজনের মতে যেহেতু এই পাখি গুলি অথিতি পাখি বা শীতের পাখি তাই নির্বিচারে তাদের হত্যা, আটক ও শিকার করে। আমরা স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনেছি তারা বলছে "এই বিদেশী পাখিগুলি আমাদের দেশের খাবার খেয়ে আবার বিদেশ চলে গেলে আমাদের লাভ কি ? ধরে ধরে খেতে পারলেই লাভ।" এমানকি আমাদের শ্রোদ্ধেয় প্রায়ত একজন অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত সংসদে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যার ফলে স্থানীয় পাখি শিকারীরা প্রবল উৎসাহে পাখি নিধন করে যাচ্ছে আইনের ভয় দেখিয়ে লাভ হচ্ছে না।



কয়েকটি কথা
১. শুধু পাখি নয় মাছ, প্রজাপতি, বাদুর, তিমি, হাঙর সহ অসংখ্য প্রাণী মাইগ্রেট বা পরিযায়ন করে
২. মানুষ অতিথি পাখি বলতে কিছু হাঁস জাতীয় পাখি বুজলেও আমাদের দেশের প্রায় ৬৫০ জাতের পাখির মধ্যে ২৫০ প্রজাতির অধিক পাখি পরিযায়ী
৩. পাখিরা শুধু শীতকালেই নয় গ্রীস্ম, শরৎ, বসন্ত সহ প্রায় সব ঋতুতেই আসে বা পরিযায়ন করে
৪. পরিযায়ী পাখিরা বিভিন্ন প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবে এটাই তাদের বিধাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত স্বভাব



প্রকৃত অর্থ কি?
বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রে ইংরেজী মাইগ্রেশনের সঠিক অর্থ পরিযায়ন আর অতিথি পাখির ইংরেজী হল গেস্ট বার্ড এবং শীতের পাখির ইংরেজী উইনটার বার্ড।
আমাদের দেশের প্রাণী বিজ্ঞানীরা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার কাজী জাকের হোসাইন, ড. রেজা খান, প্রফেসার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রফেসার নুর জাহান সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ফিরোজ, ড. মনিরুল এইচ খান, বাংলাদেশের পাখিবিদ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম আল হক কেউ কোনদিনও পরিযায়ী পাখিকে অতিথি বা শীতের পাখি বলেন নাই বা কোন বই এ উল্লেখ করেন নাই।
অথচ এই ভুল নামটি যুগ যুগ ধরে পাখি নিধন কারীদের উৎসাহ দিয়ে আসছে।



পরিশেষ
পাখিদের কোন পাসপোর্ট বা ভিসা নাই যে তারা অতিথি হবে। মানুষের বহু পূর্ব থেকে পাখিরা স্বাধীনভাবে পৃথিবীর বুকে বিচরন করে আসছে আমরা তাদেরকে পর না ভেবে আপন ভাবি আর
পাখিদের চলার পথকে নিরাপদ ও মুক্ত রাখি।
মাইন রানা
Source: prothom-aloblog

অতিথি পাখি: ক্যামেরার ঝিলিকে স্বাগত জানাতে পারি

অতিথি পাখি: ক্যামেরার ঝিলিকে স্বাগত জানাতে পারি

বাংলাদেশে ৩৭৮ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে তাদের মধ্যে ১২৮ প্রজাতির অতিথি পাখি বাকীগুলি আবাসিক পাখি। বাংলাদেশে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। অতিথি পাখি বলতে তাদের বুঝায় যারা অন্যদেশ থেকে আমাদের দেশে আসে কিন্তু বাসা করে না বা ডিম-বাচ্চা দেয় না। এদের কিছু প্রজাতি এদেশে কিছু সময়ের জন্য এসে আবার ফিরে যায়, আর কিছু যাত্রা বিরতির জন্য এ অঞ্চলে অবস্থান করে আরও দক্ষিণে চলে যায়। কিছু প্রজাতি এত বেশী সময় আমাদের দেশে থাকে যে এদের অতিথি পাখি বলে মনেই হয় না। যেমন আবাবিল পাখি যার কিছু সদস্য প্রায় সারা বছরই দেখা যায়। যদিও শীতের সময় এরা লাখে লাখে আসে। শীতের সময় এদেশের জলাভূমিগুলোতে ঝাঁক বেধে জড়ো হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির বুনো হাঁস ও অন্যান্য জলজ পাখিদের সাধারণ মানুষ অতিথি পাখি হিসেবে জানে যদিও এদের একটা বড় অংশ আমাদের দেশীয় আবাসিক পাখি। শীতের শুষ্ক মৌসুমে খাদ্য সংগ্রহের স্থান কমে যাওযায় ঝাঁক বেধে এরা জলাভূমিগুলোতে জড়ো হয়। ৬২ প্রজতির অতিথি পাখি এ অঞ্চলের বসত বাড়ী, বাগান, ঝোপ-ঝাড়, পতিতজমি, কৃষিভূমিতে বিচরণ করতে দেখা যায়। এ দলে ঈগলের মত বড় পাখি থাকলেও অধিকাংশই ছোট আকারের হওয়ায় সচরাচর নজরে আসে না। প্রধানতঃ উত্তরাঞ্চলের দেশ সমূহে যেমন চীন, সাইবেরিয়া ও ইউরোপীয় অঞ্চলে প্রচন্ড শীতের কারণে এসব পাখি অভিপ্রয়ান করে থাকে তবে কিছু পাখি যেমন আবাবিল, গুলিন্দা, চা পাখি, ছোট জিরিয়া জুলাই মাস থেকে আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। এটা সম্ভবতঃ এদের যাযাবর স্বভাবের জন্য। এসব অতিথিদের আমরা বন্দুকের গুলি দিয়ে নয় ক্যামেরার ঝিলিকে স্বাগত জানাতে পারি।

By Mahmoodkhan, somewhereinblog

পাখি দেখা

পাখি দেখা

- ফাইজুল ইসলাম

যন্ত্রসংগীত সর্বজনীন। কিন্তু পাখির ডাক আরো সর্বজনীন। এক সময় আমাদের ঘুম ভাঙতো অজস্র পাখির মধুর কল-কাকলিতে। ভোরের আলো আর পাখির ডাক এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তুলতো প্রাণ। যেন পাখির ডাক না হলে ভোর হবে না। আর ভোর না হলে ফুল ফুটবে না। কবি তাই বলেছেন ‘পাখি সব করে রব, রাত্রি পোহাইল / কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।’ কবি কাজী নজরম্নল ইসলামও ভোরের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন: ‘ত্যাজি’ নীড়/ করে ভিড় / ওড়ে পাখি আকাশে, এন্তার / গান তার / ভাসে ভোর বাতাসে।’

গ্রামে-গঞ্জে এখনো পাখি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু শহরে আঁখি মেলেও দেখা যায় না পাখি। তবু শহরে পাখি আছে। আমরা শহরে দেখি দামি পাজেরো গাড়ি। কিন্তু এই ‘পাজেরো’ মূলতঃ স্পেনের একটি পাখির নাম। দ্রুতগতিসম্পন্ন পাখির নামেই এই গাড়ি। প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, সরীসৃপ ও পাখি মূলতঃ একই বংশোদ্ভূত। আবার সরীসৃপের মধ্যে কুমিররাই পাখিদের নিকটতম জ্ঞাতি। প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে জুরাসিক সময়ে পাখিদের উৎপত্তি। প্রাচীনতম পাখির জীবাশ্মটি পাওয়া যায় ১৮৬১ সালে দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়ায়। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, এ পাখি জুরাসিক সময়ের শেষ দিকে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে বেঁচে ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, পাখির মধ্যে দু’টি বড় ধরনের শারীরস্থানগত অভিযোজন ঘটেছে। (১) পালক, সম্ভবত সরীসৃপের আঁশ থেকে উদ্ভূত। এটি দেহ আবরকের কাজ করে। আবার শরীরের স্থির তাপমাত্রা রক্ষার সামর্থ্য যোগায়। (২) ডানা, হয়তো সরীসৃপীয় পূর্বপুরুষের ৫ আঙুলবিশিষ্ট অগ্রপদ অত্যধিক পরিবর্তিত হয়েছে, এরপর অভিযোজিত পালকসহ পাখনায় রূপান্তরিত হয়েছে যা পাখিকে দান করেছে উড়ার ক্ষমতা।

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৯,০০০ প্রজাতির পাখি আছে। তন্মেধ্যে গায়ক পাখির সংখ্যাই অর্ধেকের বেশি। অর্থাৎ বেশির ভাগ পাখিই গান জানে। যারা গান জানে না তাদেরকে ইংরেজীতে বলা হয় Non-Passerines বা অগায়ক পাখি। পাখির আকার আকৃতি বহুবিধ। উটপাখির দাঁড়ানো অবস্থায় উচ্চতা ২.৫ মিটার। আর পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম পাখি হামিংবার্ডের লেজের ডগা থেকে ঠোঁটের আগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৬ সেন্টিমিটারের কম। জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে ১২ শতাধিক প্রজাতির পাখির বাস। তন্মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৬২৮ প্রজাতির পাখি। এদের মধ্যে ২৭৬টি গায়ক ও ৩৫২টি অগায়ক শ্রেণীর। অন্যদিকে ৩৮৮টি আবাসিক বা দেশীয় এবং ২৪০টি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। অতিথি পাখির মধ্যে সকলেই যে গায়ক শ্রেণীর তা নয়। গায়ক ১০৫ ও অগায়ক ১৩৫।

উপমহাদেশের যে বৃহত্তম পাখি তাকে আর সচরাচর দেখা যায় না। তার নাম সারস। দাঁড়ানো অবস্থায় তার উচ্চতা ১.৭৫ মিটার। গুটিকয় মধুপায়ী ও সানবার্ড চড়ুই অপেক্ষা ছোট। সম্ভবত এরাই এখানকার ক্ষুদ্রতম পাখি। ছোট হোক বড় হোক পাখি সকলের কাছেই প্রিয়। কিন্তু সে তুলনায় পাখিবিশারদের সংখ্যা খুব কম। তবে বাবর থেকে শাহজাহান পর্যন্ত সকল মুঘল সম্রাটই সর্বতোমুখী প্রকৃতিপ্রেমিক ছিলেন। বাবর ও তাঁর পৌত্র জাহাঙ্গীরের পাখির স্বভাব ও আচরণ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের কিছু বৈজ্ঞানিক বিবরণী রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে পুলিশ, আমলা, বন ও সেনা কর্মকর্তাদের প্রদত্ত তথ্যাদি বিভিন্ন অঞ্চলের পাখি পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই ব্রায়ান হডসন (Brain Hodgson), টি.সি জার্ডন (T.C Jerdon) ও এডওয়ার্ড ব্লিথ (Edward Blyth) প্রমুখ ব্যক্তি পাখি বিষয়ক দিগদর্শী গ্রন্থাদি রচনা করেন। ১৮৬২-১৮৬৪ সালে প্রকাশিত জার্ডনের দুই খন্ডের বইয়ের নাম Birds of India. তবে পাখি বিশারদ হিসেবে উপমহাদেশ জুড়ে যার নাম বিখ্যাত তিনি হলেন সালিম আলী। তিনি ছোটকালে পাখিশিকার করতে গিয়ে পাখির প্রেমে পড়েন। এরপর পাখি ছাড়া অন্যকিছু তার পক্ষে ভাবা সম্ভব হয়নি। এই সালিম আলী ও ডিলন রিপ্লি (Dillon Ripley) প্রণীত দশখন্ডের বইয়ের নাম Handbook of the Birds of India and Pakistan. এছাড়াও হারুন-অর-রশিদের Systematic List of the Birds of East Pakistan প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৭৯ সালে Birds of Bangladesh প্রণয়ন করেন কাজী জাকের হোসেন।

সম্প্রতি আমাদের দেশে অতিথি পাখি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে এসেছে। এ ধরনের পাখির প্রজাতি অন্তত ২০০। জানা যায় যে, ইউরেশিয়ায় ৩০০ প্রজাতির বেশি প্রজননকারী পাখির এক-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা আফ্রিকায় পরিযান করে। এসব পাখির এক-তৃতীয়াংশ আসে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সাইবেরিয়া থেকে কমসংখ্যক পাখিই আসে। তবে অধিকাংশই আসে হিমালয় ও উত্তর এশিয়া থেকে। এদের বেশির ভাগই হাঁস-জাতীয়। এরমধ্যে সরালি, খঞ্জনা, পাতারি হাঁস, পাতিতারা, লেনাজৎসা, গয়ার, ধুপনি, লালমুড়ি, মুরগ্যাধি, বামুনিয়া হাঁস, সিজু ঈগল, বাড়িঘোড়া ইত্যাদি প্রধান। শুধু পাখি নয়, পাখির বাসাও সৌন্দর্যের আধার। চড়ুই আমাদের অতি কাছের একটি পাখি। তার বাসাটিও খাসা। অন্যদিকে বাবুই পাখিরা শিল্পের বড়াই করার মতো বাসা তৈরী করে। পাখির ডিমও নয়নাভিরাম। টুনটুনি দেখতে যেমন তেমনি তার বাসা ও ডিমেরও কোন তুলনা হয় না।

পাখি প্রকৃতির এক সুন্দর সৃষ্টি। পাখি না থাকলে প্রকৃতি মানাতোনা। প্রকৃতি যে এত সুন্দর তা পাখিই গানে গানে বলে দেয়। মৌটুসি পাখিকে আমরা কে না চিনি? সারাদিন ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়। মধু খায় আর মধুর সুরে গান গায়। কখনো কখনো পাখির গান হয়ে ওঠে উদ্দেশ্যমূলক। কিছুটা ইঙ্গিতবহ। ‘টার্ণ’ নামের একটি পাখি তিনটি ডিম পেড়ে ‘ট্রিয়েগ ট্রিয়েগ’ বলে চিৎকার করতে থাকে। নরওয়েজীয় ভাষায় ‘ট্রিয়েগ’ অর্থ তিনটি ডিম। ‘কারিয়ামা’ হলো সারস পাখির একটি জাত। এরা আলাদা আলাদা দু’শ রকমের শব্দ করতে পারে। অন্য কথায় ‘দু’শো রকমের গান জানে। বিশ্বাস করাই কঠিন যে, ছোট-খাটো চেহারার ভরত পাখি সেকেন্ডে ১৩০ রকম শব্দ করতে পারে। তোতা পাখির বচন ও বাচনভঙ্গির প্রশংসা না করে পারা যায় না। কিন্তু ‘কারলিউ’ পাখির কীর্তিকলাপ আরো চমৎকার। পুরুষ কারলি স্ত্রী কারলিউয়ের বাসায় সব সময় ছোট নুড়ি পাথর বা খড়-কুটো নিয়ে আসে ‘উপহার’ হিসেবে। এরপর মাথা নুইয়ে ‘অভিবাদন’ জানায়। সেই অভিবাদন চলতে থাকে স্ত্রী পাখিটির অভিমান না ভাঙানো পর্যন্ত।

গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭) মিরপুর চিড়িয়াখানার প্যাগোডা নিঝুম দ্বীপে শীতের অতিথি পাখিদের বিদায় লগ্নে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। এদেশে অতিথি পাখিদের কেউ আসে আশ্বিন মাসে কেউবা কার্তিকে। পুরো শীত ও বসন্তের প্রথম প্রহরটা কাটিয়েই তারা জন্মভূমির পথে উড়াল দেয়। তারা আমাদের মেহমান। তাদেরকেতো আর এদেশ থেকে যেতে বলি না। পাখির উড়ার স্বাধীনতা আছে। তাদের কোন দেশ নেই, সীমানা নেই। নেই পাসপোর্ট কিংবা কাঁটাতারের বেড়া। তারা বছরে একবার এলেই বরং আমরা খুশী হই। দূরবীন ও টেলিস্কোপ নিয়ে তাদের চলাফেরা ও সৌন্দর্য দেখেই আমরা মুগ্ধ। এসব পাখি প্রদর্শনের পাশাপাশি পাখি সচেতনতার বিষয়টিও আজ জোরালো হয়েছে। পাখি মেলা, পাখি নিয়ে কথা, আলোকচিত্র, বই ও পোস্টার প্রকাশ প্রভৃতি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কারণ পাখি বেঁচে থাকলে প্রকৃতি থাকবে জীবন্ত। মানুষের মনেও তখন আনন্দের সীমা থাকবে না। এজন্যই কবি জীবনানন্দ দাশ পরজনমে পাখি হয়ে ফিরে আসতে চান। তাঁর ভাষায়-আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয়-হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে.../আমাদেরও ফিরে আসতে হবে প্রকৃতির কাছে। পাখির কাছে। কারণ পাখির কূজন-গুঞ্জনের মতো মনোমুগ্ধকর আর কিছুই হতে পারে না।

সূত্র: -ফাইজুল ইসলাম, দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারি, ২৬, ২০০৭

অতিথি পাখি শিকার: জরুরী করণীয় বিষয়

অতিথি পাখি শিকার:
জরুরী করণীয় বিষয়

অতিথি পাখিদের বিচরণ নিরাপদ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী৷ যেমন-
  • গ্রামে গঞ্জের হাটে, জেলা শহরগুলোর বাজারে ও রাজধানীর কাঁটাবন বাজারে অতিথি পাখি, বক, ঘুঘু বিক্রয় বন্ধ করতে হবে৷
  • 'হেই শিকার'– বলে যারা ফেরি করে পাখি বিক্রি করে তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সোপদ॔ করতে হবে৷
  • পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যাগে বন বিভাগ কতৃ॔ক ঘন ঘন পাখি শিকার ও বিক্রয় বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে৷
  • সাধারণ মানুষের অতিথি পাথি কেনা বন্ধ করতে হবে৷
  • পাখি শিকার করতে নিরুত্‍সাহিত করতে হবে৷
  • পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পিত বনায়ন করতে হবে৷ ফলজ ও ভেষজ গাছ বেশি করে লাগাতে হবে৷
  • জলাভূমি ও জলাশয়গুলো সংস্কার করে অতিথি পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তুলতে হবে৷
  • জলাভূমি ও জলাশয়গুলোতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে এনে বিকল্প চিন্তা করা দরকার৷
  • পাখি প্রকৃতি ও পরিবেশের পরম বন্ধু৷ আর শীতের পাখি আমাদের অতিথি৷ তাই সবাই সচেতন হোন৷ অতিথি পাখি নিধন বন্ধ করুন৷
Source: www.jeeon.com.bd

অতিথি পাখির বিপদসমূহ

অতিথি পাখির বিপদসমূহ

বার্ড ফ্লু - এর মত ভয়াবহ রোগের জীবাণু অতিথি পাখির মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ তবে এই জীবাণু সাধারণ মানুষ বা পক্ষীকূলের জন্য বিপদের কারণ নয়৷ কেননা অতিথি পাখি নিজেদের বিচরণ ক্ষেত্র ছাড়া অন্য জায়গায় যায় না৷ তাই দেশী পাখিদের এই রোগে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ তবে মানুষের পাখি শিকার এবং বিক্রয় কর্মকান্ডের কারণে এ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে৷ যারা পাখি শিকার করে …হেই শিকার– বলে ফেরী করে অতিথি পাখি বিক্রি করে তাদের এ রোগে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ পাখির মাংস সেদ্ধ হলে এই রোগের জীবাণু মরে যায়৷ তাই যারা খায় তারা নয় বরং যারা এটি বিক্রি করে বা শিকার করে অথাত্‌ পাখির সংস্পর্শে আসে তারা সংক্রমিত হতে পারে৷ তাই এই জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করতে হলে অবিলম্বে অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করা প্রয়োজন৷

তথ্যসূত্র:
দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক ইত্তেফাক

Sunday, September 12, 2010

পাখিশুমারির দুই যুগ

পাখিশুমারির দুই যুগপ্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও এখন পাখিশুমারিতে যোগ দেয়। পাখি দেখায় তাদের দক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছে জ্ঞান, সেই সঙ্গে বেড়েছে পাখি ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণের চিন্তা-ভাবনা। পাখিশুমারির ফলাফল এখন জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়
ড. এস এম এ রশীদ

পাখিশুমারি কী? কেন এই পাখিশুমারি? পাখিশুমারি করা সম্ভব কি? অনেকেই এমন প্রশ্ন করেছে। আড়ালে হাসাহাসি করেছে, তবে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আজ পাখিশুমারির দুই যুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে।
বন বিভাগের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে শীতকালীন জলচর পাখিশুমারি শুরু হয়। এর জাতীয় সমন্বয়কারী হিসেবে আবদুল ওয়াহাব আকন্দকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয় (তখন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ছিল না)। এরই অংশ হিসেবে আমি প্রথম উপকূলীয় অঞ্চলের নোয়াখালী এলাকায় শীতকালীন জলচর পাখিশুমারির কাজ শুরু করি। ওসমান গনি তখন মাইজদীতে বন বিভাগের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তিনি পাখিশুমারি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। সেই সময় হাতেগোনা দুই-একজনের কথা উল্লেখ করা যায়, যাঁরা আন্তরিকভাবে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত পাখি পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যেমন ড. সোহরাব উদ্দিন সরকার, ড. আলী রেজা খান, প্রয়াত ড. নজরুল হক, ড. নূরজাহান সরকার, ড. আনিসুজ্জামান খান, রাগীব উদ্দিন আহমদ, ড. রোনাল্ড হালদারসহ আরো কয়েকজন। যারা নিয়মিত না হলেও প্রায়ই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা আমাদের বলতেন এবং পরামর্শ দিতেন, তাঁদের মধ্যে প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন, মরহুম জি এম এম ই করিমের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বসবাসরত কিছু বিদেশিও পাখি দেখায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। যেমন ডেভ জনসন (অ্যাডভেন্টিস্ট ডেন্টাল ক্লিনিক), বিল হারভে (ব্রিটিশ কাউন্সিল) এবং ড. পল থমসন।
শৈশব থেকেই প্রকৃতি ও এর অলংকার পাখি দেখার সঙ্গে আমি জড়িত। এর জন্য প্রশংসার দাবিদার আমার বড় ভাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন মতিন (অবসরপ্রাপ্ত)। তবে পাখি দেখার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য উপলব্ধি করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়নকালে প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন ও ড. আলী রেজা খানের কাছ থেকে। মাঠে-ঘাটে ঘোরা ও বন্য প্রাণী দেখার সেই নেশা আজ অবধি ছাড়তে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়েও এই নেশা পিছু ছাড়েনি।
১৯৮৭ সালে হাতিয়ার নলচিরা, চর ভাটা, শাহেবানি চর, ঘাসিয়ার চর, ঢাল চর, নিঝুম দ্বীপ, চর রওশন, চর বাহাউদ্দিন থেকে আমি যে পাখিশুমারি শুরু করি আজ তা কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিবছর পাখি গণনাকারীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও এখন পাখিশুমারিতে যোগ দেয়। পাখি দেখায় তাদের দক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছে জ্ঞান, সেই সঙ্গে বেড়েছে পাখি ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণের চিন্তা-ভাবনা। পাখিশুমারির ফলাফল এখন জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়।
সেই শুমারিতে প্রথম বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বহু বিরল প্রজাতির পাখির শীতকালীন আবাসস্থল হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হয়। এই শুমারির ফলে জানা যায়, আমাদের উপকূল চামচ-ঠুঁটো চাপাখির প্রধান শীতকালীন আবাসস্থল। চামুচ-ঠুঁটো চাপাখি সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে। গাং চষা পাখিরও সবচেয়ে বড় দল হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের উপকূলে বাস করে। তা ছাড়া ক্র্যাব প্লোভারের অস্তিত্বও পাওয়া যায় এখানে, যা আগে জানা ছিল না। পাখিশুমারিতে বেরিয়ে আসে এমন আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্য।
প্রথম বছরে এত মূল্যবান তথ্য পাওয়ায় পরের বছর ১৯৮৮ সালে এশিয়ান ওয়েটল্যান্ড ব্যুরো থেকে জন হোয়েজ, ডেভ বেকওয়েল ও সুজান হোয়েজ বাংলাদেশে আসেন এবং জলচর পাখির বৈচিত্র্য ও বিশাল সমারোহ দেখে মুগ্ধ হন। তাঁরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে পরিযায়ীসহ আরো জলচর পাখির জন্য পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলেশিয়া (ওশেনিয়া অঞ্চল) এবং মধ্য এশিয়াকে অভিবাসী পাখির গমনপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সেই সময় থেকেই পাখিশুমারি ও জলাভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
পরে বন বিভাগ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কিছু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মকর্তা, আইডবি্লউআরবি, ইন্টারওয়েডার এবং নেকম আলাদাভাবে রামসার কনভেনশন স্বাক্ষরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে বাংলাদেশের প্রথম রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রামসার কনভেনশন স্বাক্ষর করা হয়। পাখিশুমারি কার্যক্রমের এটি একটি বড় সাফল্য।
ইংল্যান্ডের ডারেল ইনস্টিটিউট অব কনজারভেশন অ্যান্ড ইকলোজি, ক্যান্টারবারির ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে আসি এবং নেকমের পক্ষে পাখিবিদ ড. ডেরেক স্কটের সঙ্গে যৌথভাবে ক্যানাডিয়ান সিডা-র জন্য পাখি জরিপ করি। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বেশ কিছু জলাভূমিকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণার জন্য প্রস্তাব করি। এর মধ্যে আছে টাঙ্গুয়ার হাওর, গুরমার হাওর, হাকালুকি, হাইল, কাওয়াদীঘি, বালাই ও মুরালি হাওর। পরবর্তীতে নেকম ফ্লাড অ্যাকশান প্লানের আওতায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জলাভূমি ও জলজসম্পদ সংরক্ষণের জরিপ করা হয়।
পাখিশুমারি বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে, আমাদের দেশে পাখির বিভিন্ন প্রজাতির তালিকায় যোগ করেছে নতুন প্রজাতি। তাদের আবাসস্থল সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়িয়েছে, তাদের সংরক্ষণের জন্য জনমত ও সচেতনতা বাড়িয়েছে, সরকার ও জনগণকে পাখি সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করেছে। যাঁরা প্রথমদিকে হাসাহাসি করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন পাখিশুমারিতে যোগ দিয়েছেন।
চার বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিডাবি্লউবিএমপি-এর আওতায় প্রতি বছর পাখিশুমারি হচ্ছে। এখন শৌখিন পাখি পর্যবেক্ষকরাও নিয়মিত পাখি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছেন। তাঁরা পাহাড়, বন, চর, জলাভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পাখি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানাচ্ছেন। পাখি ও বন্য প্রাণী নিয়ে সরকারের কর্মপরিধিও বেড়েছে। ফলে দেশে বাড়ছে বন্য প্রাণীর জন্য সংরক্ষিত এলাকা। পাখি সংরক্ষণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি করিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অবদান রাখা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। আর এর খাতিরে পাখিশুমারির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও শৌখিন পর্যবেক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতা করা বাঞ্ছনীয়। সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর পরিকল্পনামাফিক এ কাজটি পরিচালনার জন্য সরকারের বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত।
আমি মনে করি, এ কাজের যথোপযুক্ত সরকারি সংস্থা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বাৎসরিক বাজেটে বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ ও শৌখিন পর্যবেক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপাতত ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।

লেখক : নির্বাহী প্রধান, সেন্টার ফর অ্যাড্ভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ক্যারিনাম)

Source: Dailykalerkantho

পাখি রক্ষায় এগিয়ে আসুন :শেখ রেহানা

পাখি রক্ষায় এগিয়ে আসুন :শেখ রেহানা

বার্ডস অব বাংলাদেশের মোড়ক উন্মোচন


০০ইত্তেফাক রিপোর্ট, জানুয়ারি ১৩, ২০১১,

পাখি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠা কন্যা শেখ রেহানা। গতকাল বুধবার পাখি বিষয়ক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, 'পশু-পাখি হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলো রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে, মূল্যবান এই সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।'

রাজধানীর বসুন্ধরায় ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) ক্যাম্পাসে প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ রোনাল্ড আর হালদার রচিত বার্ডস অব বাংলাদেশ শীর্ষক ছবি সম্বলিত নির্দেশনামূলক এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম ওমর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তৌহিদ সামাদ, বইয়ের লেখক রোনাল্ড আর হালদার, স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট সাইন্স এন্ড ম্যানেজমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, আইইউসিএন'র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. নিয়াজ আহমেদ খান, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ইনাম উল হক ও পরিবেশবিদ ইনাম তালুকদার।

শেখ রেহানা বলেন, পাখি সকলের প্রিয়। পাখি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। পাখি কবি ও ছড়াকারদেরও ভাবের বিষয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্পদ হিসেবে পাখির তুলনা নেই। তাই পাখিদের বাঁচান। দুর্বল প্রজাতির এই প্রাণীকে রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, পাখির স্বভাবজাত সৌন্দর্যকে স্বাধীনভাবে থাকতে দিন। কারণ জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই সৌন্দর্য আমাদের চিত্তে শান্তি এনে দিতে পারে।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বাবা তার জীবনের একটা বড় অংশ জেলে কাটিয়েছেন। জেলে থাকা অবস্থায় তিনি পশু-পাখিদের নিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনের সময় কাটাতেন। তার এই ভালোবাসার কারণেই স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধ্যাদেশ জারি করেন। প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বইটি পর্যটক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য সহায়ক হবে। বিদেশীদের কাছে এদেশের পাখির পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হবে।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। তাদের আবাসস্থল ধ্বংস এবং মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে প্রতি ৪ বছরে একটি প্রজাতির পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৮ প্রজাতির পাখির মধ্যে ২ প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। গত ৪০ বছরে আমাদের দেশের অনেক প্রজাতির পাখিও বিলুপ্ত হয়েছে।

বার্ডস অব বাংলাদেশ বইটিতে ৪৭০ প্রজাতির পাখির ছবিসহ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় রচিত এই বইয়ের মূল্য এক হাজার টাকা। এটি বাংলাদেশের পাখির ছবি সম্বলিত একমাত্র নির্দেশনামূলক গ্রন্থ। বইয়ের রচয়িতা রোনাল্ড আর হালদার পেশাগত জীবনে একজন দন্ত চিকিৎসক। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ পাখি গবেষণার কাজ করে আসছেন।

Friday, September 10, 2010

বাঁচতে এসেছিল ওরা! প্রকৃতির সন্তান

বাঁচতে এসেছিল ওরা!

দূরদেশের প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচতে এসেছিল ওরা। আশ্রয় নিয়েছিল এ দেশেরই এক হাওরে। নির্ভাবনায় ঝাঁক বেঁধে হুটোপুটি করতে করতে খাবার খুঁজছিল। একপর্যায়ে পেয়েও যায় লোভনীয় খাবার। কিন্তু সে খাবার খেয়ে সতেজ হয়ে ওঠেনি ওরা। বরং নিস্তেজ হয়ে একে একে হারিয়ে যায় মৃত্যুর ঠিকানায়। এভাবে পাখিশিকারিদের বিষটোপের বলি হয় অতিথি পাখিগুলো।
গত সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরের চান্দের বিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে ৩২টি মৃত পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। বিষটোপ খেয়ে স্থানীয় একটি খামারের প্রায় ২৫০টি হাঁস মারা যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পরিবেশ অধিদপ্তরের গ্রাম সংরক্ষক দলের (ভিসিজি) দুই পাহারাদার আজির উদ্দিন (৪০) ও ছনু মিয়াকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে এই দুজনসহ চারজনের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় বন আইনে মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, উপজেলা প্রশাসন ও হাকালুকি হাওরের উন্নয়নে কর্মরত পরিবেশ অধিদপ্তরের উপকূলীয় ও জলাভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (সিডব্লিউবিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি গ্রামের মুসলিম আলী ও সামছু মিয়া মাছের ঝুড়ি নিয়ে চান্দের বিল এলাকা থেকে আজিমগঞ্জ বাজারে ফিরছিলেন। পথে সন্দেহ হলে সিডব্লিউবিএমপির ভিসিজি পাহারাদার আজির উদ্দিন ও ছনু মিয়া তাঁদের আটকান।
পুলিশের কাছে দেওয়া আজির উদ্দিন ও ছনুর ভাষ্যমতে, মাছের ঝুড়ির ঢাকনা খুলে তাঁরা বেশ কিছু মৃত অতিথি পাখি দেখতে পান। এ সময় বিপদ টের পেয়ে মুসলিম ও সামছু ওই ঝুড়ি ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান।
ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সিডব্লিউবিএমপির কুলাউড়া কার্যালয়ের উদ্যান কর্মকর্তা আবদুল মালেক, বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা মিয়া সিরাজুল হক ঘটনাস্থলে যান।
আবদুল মালেক জানান, তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে পাতি সরালি ও লেনজা হাঁস জাতের ৩২টি মৃত অতিথি পাখি উদ্ধার করেন। পাখিগুলো জবাই করা ছিল।
বড়লেখা থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন জানান, অতিথি পাখি নিধনের ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে মিয়া সিরাজুল হক বাদী হয়ে মুসলিম আলী, সামছু মিয়া, আজির উদ্দিন ও ছনু মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। শিকারিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগে আজির ও ছনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, বিষটোপ খেয়েই পাখিগুলো মারা গেছে। বিষের ধরন পরীক্ষা করতে চারটি মৃত অতিথি পাখি ঢাকার কেন্দ্রীয় পশুরোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে পাঠানো হচ্ছে।

প্রকৃতির সন্তান

কবি রণজিত্ দাশগুপ্ত লিখেছিলেন, বৃক্ষে হাত রেখে কবি টের প্রায় প্রাণ, আর ব্যবসায়ী দেখে কেবলই কাঠ। যখন হাকালুকি হাওরে হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে কেউ দেখে প্রকৃতির অপরূপ লীলা, তখন একদল শিকারি দেখে একগুচ্ছ স্বাদু মাংসের ওড়াউড়ি। অথচ পাখি হলো প্রকৃতির শিশু। পাখির সৌন্দর্য আমাদের মধ্যে মমতার অনুভব জাগায়। অথচ এসব ভুলে অতিথি পাখি শিকার করা বা তার মাংস খাওয়ার জন্য বিক্রি করা হয়। এটা কেবল নিষ্ঠুরতাই নয়, বর্বরতারই নামান্তর। প্রতিবছর শীতের শেষাশেষি আমাদের বিল-হাওরগুলো দূর-দূরান্তর থেকে আসা নানা জাতের অতিথি(নাকি পরিযায়ী?) পাখিতে ভরে যায়। এবারও তাই ঘটেছে হাকালুকি হাওরে (সূত্র: প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি)। দর্শনার্থীদের উত্পাত, পাখিভক্ষক শিকারিদের আক্রমণ যেখানে থাকে না, সেখানে রংবেরঙের অজস্র পাখিতে স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তা কেবলই দেখার জিনিস, খেয়ে ফেলার জিনিস নয়! তার পরও একশ্রেণীর মানুষ পাখির মাংসের লোভ সংবরণ করতে পারে না। এমনকি অনেক হোটেলকেও পাখির মাংসের রান্না পরিবেশনের বড়াই করতে দেখা যায়। তারা কি ভেবে দেখেছে, কেবল রসনা আর ব্যবসার জন্য তারা শুধু প্রকৃতিরই ক্ষতি করছে না, মানুষ হিসেবেও অনেক হীন কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কিছু মানুষ সাধারণত মৌসুমি পেশা হিসেবে পাখি শিকার করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের জন্য নয়, শহর-বাজারে বিক্রির জন্যই তারা ফাঁদ পেতে পাখি ধরে বা শিকার করে। তাই, তাদের কাছ থেকে পাখি কেনা বন্ধ করলে শিকারিরা নিরুত্সাহিত হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ পুলিশ প্রশাসনের। এমনকি যেসব এলাকার বিল-হাওর-জলাশয়ে অতিথি পাখির সমাগম হয়, সেসব এলাকার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেরও উচিত এগিয়ে আসা।
Source: www.krishe.com

Wednesday, September 8, 2010

বাংলাদেশের পাখিশুমারি

বাংলাদেশের পাখিশুমারি গাজী মুনছুর আজিজ,০২ জানুয়ারি ২০১১

চারপাশে নদী। মাঝেখানে জেগে ওঠা বিশাল চর। নির্জন এই চরে মানুষের কোনো বসতি নেই। তবে বসত করছে নানা প্রজাতির বর্ণিল রংয়ের ছোট-বড় হাজারও পরিযায়ী পাখি। আর এসব পাখি দেখার জন্য প্রতি বছর শীতকালে দলে দলে পাখিপ্রেমিক পর্যটক ছুটে যান উপকূলের চরগুলোতে। কেবল পাখি দেখার জন্যই নয়, তারা তুলে আনেন এসব পাখির সংখ্যা, পাখির জাত-প্রজাতি। আর ক্যামেরাবন্দী করেন এসব পাখির আলোকচিত্র, ভিডিও এবং কণ্ঠস্বর। তারপর মানুষকে জানিয়ে দেন পরিবেশ ও প্রকৃতির অনন্য বন্ধু এসব পাখির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। আর এর মাধ্যমে তারা খুঁজে পান অন্যরকম আনন্দ।

পাখি দেখার এমন আনন্দ পেতেই গত বছরের ৭ জানুয়ারি বিকালে ঢাকা সদরঘাট থেকে একদল পাখিপ্রেমীর সঙ্গে লঞ্চযোগে রওনা দেই উপকূলীয় জেলা ভোলায়। উদ্দেশ্য উপকূলীয় জলচর পাখিশুমারি। দশজনের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়কারী ইনাম আল হক। তার নেতৃত্বেই প্রতি বছর বাংলাদেশে জলচর পাখিশুমারি হয়ে থাকে। ৮ জানুয়ারি সকালে আমরা ভোলার ঘোষেরহাট লঞ্চঘাটে পেঁৗছাই। লঞ্চ থেকে নেমে ভাড়া করা ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় রওনা হই চর ফ্যাশনের শাহজালাল চরের দিকে।
মেঘনা নদী দিয়ে নৌকা এগিয়ে চলে। মাঝে-মধ্যে দেখা যায়, ছোট পানচিল নদী থেকে মাছ তুলে নিচ্ছে। চোখে পড়ে জেগে ওঠা ছোট ছোট চর। আর সে চরে বসে আছে নানা রংয়ের নানা প্রজাতির পাখি। আমাদের পাখিপ্রেমীরা দুরবিন দিয়ে এসব পাখি দেখেন, ছবি তোলেন এবং খাতায় লেখেন এর সংখ্যা।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর নৌকা আসে শাহজালাল চরে। এই চরের এক পাশে বিশাল কেওড়া বন অন্যপাশে মেঘনা নদী। চরে নেমে বনের পাশেই শুকনো বালুতে আমরা রাতে থাকার জন্য ছোট-বড় চারটি তাঁবু তৈরি করি। তাঁবু তৈরি করতে করতে সন্ধ্যা নেমে আসে। সূর্য ডুব দেয় মেঘনায়। সন্ধ্যায় নদীর তীরে সবাই বসে চা খেতে খেতে পাখির গল্প শোনান ইনাম আল হক।
রাতে নিশিবকের ডাক শুনতে শুনতে ঘুমাই আর সকালে ঘুম ভাঙে বনের পাখির কিচিরমিচিরে। চরে ঘুমানোর এই প্রথম অভিজ্ঞতা। মনে হলো অন্যরকম ভালো লাগার কথা। প্রায় ১৫ বছর আগে এই চরটি জেগে ওঠে। তখন সরকারিভাবে একে বনায়ন করা হয়। সকাল সাতটার আগেই সবাই ঘুম থেকে উঠি। তৈরি হই পাখি দেখতে। নৌকায় রান্না করা গরম খিচুড়ি খেয়ে রওনা দিই পাখির খোঁজে। আমাদের কারও হাতে ক্যামেরা, কারও হাতে দুরবিন বা টেলিস্কোপ। কিংবা কারও হাতে শুমারির কাগজ, কেউ বা করছেন ভিডিও। বিশাল এই চরে প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে কিংবা কখনো ছোট নৌকা করে দূরের ছোট্ট চরে গিয়ে আমরা দেখেছি ৪১ প্রজাতির প্রায় ১৪ হাজার পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে আছে দেশি কানিবক, গো-বগা, মাঝলা বগা, ধুপনি বক, কালামাথা কান্তেচরা, পাতি চখাচখী, ইউরেশিও সিঁথিহাঁস, পাতি তিলিহাঁস, উত্তুরে লেঞ্জাহাঁস, উত্তুরে খুন্তেহাঁস, পাকড়া উল্টোঠুটি, ছোট নথজিরিয়া, কালালেজ, জৌরালি, নাটা গুলিন্দা, ইউরেশিও গুলিন্দা, ছোট পানচিল, ছোট পানকৌড়ি, ছোট বগা, বড় বগা, পিয়ং হাঁস, গিরিয়া হাঁস, প্রশান্ত সোনাজিরিয়া, মেটে জিরিয়া, পাতি লালপা, পাতি সবুজপা, পাতি বাটান, টেরেক বাটান, জুলফি পানচিল, খয়রামাথা গাঙচিল, কাসপিয়ান পানচিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
দলনেতা ইনাম আল হক টেলিস্কোপে এসব পাখি সবাইকে দেখান আর সেই সঙ্গে বলেন পাখির নাম, প্রজাতি, আবাসন, খাদ্যসহ বিভিন্ন বর্ণনা। সত্যিই নতুন নতুন পাখি দেখে, তার নাম শুনে খুঁজে পাই অন্যরকম আনন্দ। একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পাখি দেখার কাজ। তারপর সন্ধ্যায় ফিরি তাঁবুতে। সারাদিন চরে রোদের মধ্যে কখনো বালুতে, কখনো কাদা মাটিতে কিংবা কখনো শক্ত ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে আমরা সবাই কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। তারপরও সবার মুখে ছিল নতুন পাখি চেনার আনন্দ। পরদিন সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে তাঁবু গুছিয়ে আমরা রওনা হই ঘোষেরহাট লঞ্চঘাটের উদ্দেশে। পথে আমরা পাখি দেখি ঢালচর, কলমীরচর ও এর আশপাশের ছোট ছোট চরগুলোতে। পেঁৗছাই বেলা তিনটায়। তারপর উঠি লঞ্চে। লঞ্চ ছাড়ে। পরদিন ভোরে আসি ঢাকায়। এর আগে ২০০৯ সালে আরও একবার গিয়েছিলাম উপকূলীয় এলাকায় জলচর পাখি শুমারি করতে। ১৬ থেকে ২৩ জানুয়ারি এই শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের সঙ্গে ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী ড. রোলান্ড হালদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাগ বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল খান, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি পর্যবেক্ষক এম এ মুহিত, সামিউল মোহসেনিন, সায়েম ইউ চৌধুরী ও সীমান্ত দীপু।
ঢাকা সদর ঘাট থেকে ১৫ জানুয়ারি রাত ৮টায় এমভি গ্লো্লরি অব শ্রীনগর-৩ লঞ্চে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সেবার ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় ২০টি চরে ৪৯ প্রজাতির প্রায় ৬০ হাজার পরিযায়ী পাখি শুমারি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ছোটখাটো অন্যান্য চরেও উড়ন্ত অবস্থায় দেখা গেছে আরও প্রায় ৪০ হাজার পাখি।
বাংলাদেশের পাখি শুমারি বিষয়ে ইনাম আল হক বলেন, বিশ্বব্যাপী পাখি নিয়ে গবেষণা করছে 'ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল' (ডবি্ল্লউআই) সংস্থা। এই সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের সংগঠনের নাম 'এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাস' (এডবি্ল্লউসি)। এই সংস্থা প্রতি বছর শীতকালে এশিয়ার দেশগুলোতে একযোগে জলচর পাখিশুমারি করে থাকে। এই সংস্থার বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। এই ক্লাবের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়, হাওর-বাঁওড় ও উপকূলীয় এলাকায় আমরা এই পাখিশুমারি করে আসছি। আমাদের শুমারির এই ফলাফল ওয়েটল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রকাশানায় তুলে ধরে।
Source: www.bangladesh-pratidin.com

Friday, September 3, 2010

পদ্মার চরে বিরল ‘বাংলা বাবুই’ পাখির বাসা

পদ্মার চরে বিরল ‘বাংলা বাবুই’ পাখির বাসা

সৌরভ মাহমুদ

‘বাংলা বাবুই’ পাখির বাসা

পাখিটি এখনো আমাদের দেশের বিপন্ন পাখির তালিকায় আসেনি। অথচ বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis) দক্ষিণ এশিয়ার একটি এন্ডেমিক পাখি। এন্ডেমিক বলতে বোঝায় কোনো প্রজাতির নির্দিষ্ট কোনো ভৌগোলিক স্থানে সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়া। এ বাবুই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমাদের তিন প্রজাতির বাবুই হলো দেশি বাবুই (Ploceus philippinus), দাগি বাবুই (Ploceus manyar) ও বাংলা বাবুই। এদের মধ্যে দেশি বাবুই দেশের সব গ্রামের তাল, নারিকেল, খেজুর, রেইনট্রি গাছে দলবেঁধে বাসা বোনে। কিন্তু বাংলা ও দাগি বাবুই বিরল।

বাংলা বাবুই
দাগি বাবুই
দেশি বাবুই

সম্প্রতি সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) হয়ে বন্য প্রাণী ও গাছপালাবিষয়ক এক গবেষণার কাজে পদ্মার একটি চরে গিয়ে দেখা গেছে এই বাসা। মাত্র একটি বাসাই ছিল। চরটিতে দেশি মেটে হাঁস, কোড়া, ধলা চিল, বিপন্ন নাকতা হাঁস, ভ্রমর ছোটন, কয়েক প্রজাতির বুশ লার্ক ও প্রিনিয়াও দেখে গেছে। গবেষক দলের প্রধান ছিলেন সিইজিআইএসের পরিবেশবিজ্ঞানী ইশতিয়াক সোবাহান।

বাংলা বাবুই

বাংলা বাবুইয়ের বাসা করার জন্য প্রয়োজন হয় নলখাগড়া ও হোগলার বন। কিন্তু দেশে নল ও হোগলার বন কমে যাওয়ায় এই বাংলা বাবুইয়ের সংখ্যা খুবই কম। তা ছাড়া এই পাখি যেখানে বাস করে—নল ও হোগলার বনে—সেখানে মানুষের চলাচল থাকে। আর বাসা বোনে মানুষের হাতের নাগালে পাঁচ থেকে ছয় ফুট ওপরে। তাই সহজেই গ্রাম কিংবা চর এলাকার অসচেতন মানুষ এদের বাস ভেঙে ফেলে। এ কারণে অধিকাংশ বাংলা বাবুই ছানা ফুটিয়ে বড় করে তুলে নিতে পারে না।

বাবুই

বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, ‘বাংলা বাবুই, যার নামের শেষে বেঙ্গেলেনসিন আছে, তাই এরা বাংলারই বাবুই। তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এ পাখি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে মাত্র ১০০টি বাংলা বাবুই থাকতে পারে।’ তিনি অরও জানান, ‘২০০৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের এক গ্রামে হোগলার বনে কিছু বাসা দেখেছিলাম, কিন্তু কয়েক দিন পর গিয়ে আর একটি বাসাও দেখতে পাইনি; মানুষ ভেঙে ফেলেছে!’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান জানান, তিনি যমুনার একটি চরে ১৯৯৫ সালে বাসা ও একঝাঁক বাংলা বাবুই দেখেছিলেন।

একঝাঁক বাংলা বাবুই

যেহেতু এ পাখি মানুষের খুব নাগালে বাসা বোনে, তাই মানুষের সচেতনতাই পারে এ পাখির বংশ টিকিয়ে রাখতে। তা ছাড়া এ পাখির যে চরে বিচরণ আছে এবং বাসা বোনে, অন্তত সে রকম একটি চরকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা কিংবা পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। কারণ একটি প্রজাতি হারিয়ে গেল তাকে আর কোনো দিন পৃথিবীতে ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়!

http://rezowan.wordpress.com