বিলুপ্ত : পাখি আর ডাকে না
একটা সময় গেছে- প্রতিবছরই শীতকালে (১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত) সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওর-বিলে যেতাম পাখি দেখতে। এখন আর কিন্তু যাওয়া হয় না। বিশেষ করে ঐদিনগুলোতে রঘুনন্দন পাহাড়ের আশেপাশে বেড়ানোটা ছিল বেশ আনন্দের। ঐদিনগুলোতে বনে-বাদাড়ে, হাওর-বিলে, জলাভূমিতে কত না প্রজাতির পাখি দেখেছি-তার হিসেবে এতোদিনে অনেকটাই ভুলে গ্যাছি। একবারের কথা বেশ করে এখনও মনে পড়ে। সেবারতো অন্তত দেড়শো প্রজাতির পাখি গুণতে সক্ষম হয়েছিলাম। যারা আজকাল বিল-হাওরে যান তারাই বলেন, পাখির দেখাতো তেমন একটা পেলাম না। হঠাৎ হঠাৎ পাখি দেখি। মনে হয় ওরা যেনো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
শীতের সময় হাওর, বনাঞ্চলে, পাহাড়ে, জলাভূমিতে যে সব পাখি দেখা যায় এদের একটা বড় অংশই হলো শীত যাপন করতে আসা বিদেশি পাখির দল। কিন্তু আজকাল বাংলার কোথাও ঘুরে এতোগুলো প্রজাতির পাখি দেখার কথা কেউই ভাবতে পারেন না। পারবেনই বা কেন? আমাদের বাংলাদেশে পাখি দেখার জন্য ক’টাইবা পার্ক অথবা পাখি অভয়ারণ্য রয়েছে। ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ছাড়াও কয়েকটি অভয়ারণ্য থাকলেও ঐসব জায়গায় হাতে গোনা কয়েক প্রজাতির পাখিই দেখা যায় মাত্র। সংরক্ষণের অভাবেই কিন্তু ঐসব অভয়ারণ্য থেকে পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি পাখির অভয়ারণ্য এলাকা দেখে এতোই মুগ্ধ হয়েলিাম-সে কথা কোনদিনই যে ভোলা যাবে না। একবারতো আগ্রা-জয়পুর বেড়াতে গিয়ে ভরতপুর পাখির অভয়ারণ্যে গিয়ে অবাক। ৩০ বর্গ কিমির জলাভূমি ও জঙ্গল নিয়ে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। ১৯৯০ সালে এখানে গিয়ে দেখলাম, পাখি চিনিয়ে দেয়ার জন্য গাইডও পাওয়া যায়। তিনি আমাকে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রজাতি পাখি দেখিয়েছিলেন। এখানে বনে ঢোকবার জন্য আলাদা টিকিটও কাটতে হয়। শীতের সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা বনে ঢুকতে প্রথমটায় গা ছমছম করেছিল। এখানের জলাগুলির মধ্যে বিভাজন রেখা টেনেছে ইটে বাঁধানো সরু সরু রাস্তা। গাছে, জলায়, ঝোপে যেনো পাখির মেলা বসে যায়। এমনটি দেখে তখন বার বার মনে পড়ছিল অতীত দিনের কথা। ১৯৫৮-৬০ সালে আমাদের ছোট্ট শহর পিরোজপুরে ঘুম ভাংগতো পাখির ডাকে। পাপিয়া, বুলবুলি পাখি দেখে আমরাও গাইতাম-‘ফুল ফুটানো গান গেয়ে যায় পাপিয়া বুলবুল গোঃ’। এ গান তো গেয়েছিলেন কানন দেবী। রেকর্ডে তার গান শুনে শুনে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে দেখতাম কত না পাখি। ইদানীং পিরোজপুর গিয়ে পাখিদের দেখাতো আর পেলাম না। তখন প্রশ্ন জেগেছিল, টিয়া, ময়না, বুলবুলি, পাপিয়া, তোতা, ময়ূর, পেঁচা, ঘুঘু ওরা কি চিরতরে হারিয়ে গেলো!
এই তো ৪৫ বছর আগে যখন গাবখান নদী দিয়ে ছোট লঞ্চে বসে শেখেরহাটে আসতাম তখন ঘুঘুর ডাক শুনে ছুটে যেতে মন চাইতো জুলুহারের দিকে। এই জুলুহার স্কুল থেকেই আমার বাবা আমির হোসেন মিয়া ১৯২৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। বাবার মুখেই শুনেছি, নদী পেরিয়ে গাঁয়ের পথ ধরে হাঁটতেই দু’ধারে দেখা যেতো টিয়া, ময়না, ঘুঘু, পাপিয়া, বউ কথা কও, ডাহুক, পেঁচা পাখিদের অবাধ বিচরণ। ময়ূরও নাকি ছিলো। সেই জুলুহারে ক’দিন আগে গিয়ে একটি পাখিও চোখে পড়লো না। সময়ে কি না হয়ে গেলো। তখন বার বার মনে হলো-কবির লেখা ঃ ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এ চরণটি কি আজ মিথ্যে হয়ে গেলো!
আমাদের এই বাংলাদেশে হাওর বিলের তো অভাব নেই। এসব জায়গার আশেপাশে গাছ-পালা তো কম নেই। বন এলাকাও তো বিক্ষিপ্তভাবে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে। তারপরেও পাখিদের বিচরণ এতোটা কম কেন? এ প্রশ্ন জাগা কিন্তু তাই অবান্তর নয়! দেশের হাওর-বিল এলাকায় পাখির অভয়ারণ্য করার কথা-সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তখনই ভেবে দেখতে হবে। নচেৎ আগামী প্রজন্ম স্বচক্ষে পাখি দেখার সুযোগ থেকে যে বঞ্চিত হবে।
শীতের সময় হাওর, বনাঞ্চলে, পাহাড়ে, জলাভূমিতে যে সব পাখি দেখা যায় এদের একটা বড় অংশই হলো শীত যাপন করতে আসা বিদেশি পাখির দল। কিন্তু আজকাল বাংলার কোথাও ঘুরে এতোগুলো প্রজাতির পাখি দেখার কথা কেউই ভাবতে পারেন না। পারবেনই বা কেন? আমাদের বাংলাদেশে পাখি দেখার জন্য ক’টাইবা পার্ক অথবা পাখি অভয়ারণ্য রয়েছে। ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক ছাড়াও কয়েকটি অভয়ারণ্য থাকলেও ঐসব জায়গায় হাতে গোনা কয়েক প্রজাতির পাখিই দেখা যায় মাত্র। সংরক্ষণের অভাবেই কিন্তু ঐসব অভয়ারণ্য থেকে পাখিরা হারিয়ে যাচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি পাখির অভয়ারণ্য এলাকা দেখে এতোই মুগ্ধ হয়েলিাম-সে কথা কোনদিনই যে ভোলা যাবে না। একবারতো আগ্রা-জয়পুর বেড়াতে গিয়ে ভরতপুর পাখির অভয়ারণ্যে গিয়ে অবাক। ৩০ বর্গ কিমির জলাভূমি ও জঙ্গল নিয়ে গড়ে উঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। ১৯৯০ সালে এখানে গিয়ে দেখলাম, পাখি চিনিয়ে দেয়ার জন্য গাইডও পাওয়া যায়। তিনি আমাকে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রজাতি পাখি দেখিয়েছিলেন। এখানে বনে ঢোকবার জন্য আলাদা টিকিটও কাটতে হয়। শীতের সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা বনে ঢুকতে প্রথমটায় গা ছমছম করেছিল। এখানের জলাগুলির মধ্যে বিভাজন রেখা টেনেছে ইটে বাঁধানো সরু সরু রাস্তা। গাছে, জলায়, ঝোপে যেনো পাখির মেলা বসে যায়। এমনটি দেখে তখন বার বার মনে পড়ছিল অতীত দিনের কথা। ১৯৫৮-৬০ সালে আমাদের ছোট্ট শহর পিরোজপুরে ঘুম ভাংগতো পাখির ডাকে। পাপিয়া, বুলবুলি পাখি দেখে আমরাও গাইতাম-‘ফুল ফুটানো গান গেয়ে যায় পাপিয়া বুলবুল গোঃ’। এ গান তো গেয়েছিলেন কানন দেবী। রেকর্ডে তার গান শুনে শুনে পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে দেখতাম কত না পাখি। ইদানীং পিরোজপুর গিয়ে পাখিদের দেখাতো আর পেলাম না। তখন প্রশ্ন জেগেছিল, টিয়া, ময়না, বুলবুলি, পাপিয়া, তোতা, ময়ূর, পেঁচা, ঘুঘু ওরা কি চিরতরে হারিয়ে গেলো!
এই তো ৪৫ বছর আগে যখন গাবখান নদী দিয়ে ছোট লঞ্চে বসে শেখেরহাটে আসতাম তখন ঘুঘুর ডাক শুনে ছুটে যেতে মন চাইতো জুলুহারের দিকে। এই জুলুহার স্কুল থেকেই আমার বাবা আমির হোসেন মিয়া ১৯২৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। বাবার মুখেই শুনেছি, নদী পেরিয়ে গাঁয়ের পথ ধরে হাঁটতেই দু’ধারে দেখা যেতো টিয়া, ময়না, ঘুঘু, পাপিয়া, বউ কথা কও, ডাহুক, পেঁচা পাখিদের অবাধ বিচরণ। ময়ূরও নাকি ছিলো। সেই জুলুহারে ক’দিন আগে গিয়ে একটি পাখিও চোখে পড়লো না। সময়ে কি না হয়ে গেলো। তখন বার বার মনে হলো-কবির লেখা ঃ ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এ চরণটি কি আজ মিথ্যে হয়ে গেলো!
আমাদের এই বাংলাদেশে হাওর বিলের তো অভাব নেই। এসব জায়গার আশেপাশে গাছ-পালা তো কম নেই। বন এলাকাও তো বিক্ষিপ্তভাবে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে। তারপরেও পাখিদের বিচরণ এতোটা কম কেন? এ প্রশ্ন জাগা কিন্তু তাই অবান্তর নয়! দেশের হাওর-বিল এলাকায় পাখির অভয়ারণ্য করার কথা-সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তখনই ভেবে দেখতে হবে। নচেৎ আগামী প্রজন্ম স্বচক্ষে পাখি দেখার সুযোগ থেকে যে বঞ্চিত হবে।
-লিয়াকত হোসেন খোকন
দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারি, ২, ২০০৮
No comments:
Post a Comment