Wednesday, November 10, 2010

প্রিয় অতিথি পাখি, এখানেই থাকো/ মাঝে মাঝে বেড়াতে যেও নিজের দেশে.

প্রিয় অতিথি পাখি, এখানেই থাকো/ মাঝে মাঝে বেড়াতে যেও নিজের দেশে.


বছর ঘুরে ফের বাংলাদেশে এসে কেমন বোধ করছে প্রিয় অতিথি পাখিরা! আমাদের বিধ্বস্ত প্রকৃতি তাদের আপ্যায়ন করতে পারছে তো? নাকি ক্রমে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে আমরা বঞ্চিত হতে চলেছি শুদ্ধতম সঙ্গীত পাখির গান থেকে? এ মৌসুমে শিকারি বিবেকবানরা কি ভাবছেন? এসব জিজ্ঞাসার সঠিক জবাব পেতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। যে দেশের মানুষগুলো মিছেমিছি নাস্তানাবুদ হয় প্রকৃতির খেয়ালিপনায়, সে দেশের পাখিরাই বিপদগ্রস্ত ডানা ও ঝাঝরা বুক নিয়ে উপাদেয় খাদ্য হয় মানুষের। যে কারণে দুবেলা খাবারের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত কেরানি থেকে ওপর মহল পর্যন্ত একটি পাখির গানের মূল্য শূন্যের কোঠায়; অবুঝ পাখির অভয়ারণ্য কিংবা পাখি প্রসঙ্গ তাই কেউই তুলছে না। আসল কথা, আমরা খরায় বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করি কিন্তু বৃক্ষ লাগাই নাÑ মঙ্গা বা যে কোনো দুর্যোগে ত্রাণের ব্যবস্থা করি, শুধু কাজের খোজ দিতে গিয়ে খাই হিমশিম। আর যে লোকটি রাস্তায় পাখি বিক্রি করছে, সামর্থ্য থাকলে তার কাছ থেকে একটি পাখি কিনি, কিন্তু এ ঘৃণ্য কাজটি না করতে লোকটিকে কখনো বারণ করি না বা কেনা সেই পাখিটির পায়ে মুক্তির চিঠি লিখে আকাশে উড়িয়েও দিই না। অতঃপর সবুজ প্রাণের নিরহঙ্কার পাখিটির পরিণতি আমার ঘরের ভয়ঙ্কর নি®প্রাণ খাচা! সত্যি বলতে, খাইয়ে বা না খাইয়ে তাকে একদিন হত্যাই করি!
তবু। এতো দুর্যোগ, দুর্দশা, দুর্মূল্য ও সুবিধাবঞ্চিত থেকেও আমাদের অনেকেই কেদে ওঠে পাখির মৃতদেহ দেখে, তাই সঙ্গিনীর খাবার আনতে গিয়ে নিখোজ পাখির জন্য আমাদের উদ্বেগ দীর্ঘতর হয়। এ দেশের হাওরে-বাওড়ে, বনবাদাড়ে ও কারো বাড়ির নিরাপদ প্রশ্রয়ে বাসা বাধে পাখি। আমরা অতিথি পাখির জন্য উদ্যোগ নিই নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থলের। সত্যি ও আনন্দদায়ক ব্যাপার যে, শীতে এখানে বেড়াতে এসে কিছু পাখি আর ফেরে না নিজ দেশে, এরা স্থায়ী জীবন সূচনা করে এসব আবাসস্থলেই। ফলে আমাদের পাখিমেলা বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা হয়। পাখি নিধনের বিরুদ্ধে তাই আমরা ক্যাম্পেইন করি। শুধু পাখির ভবিষ্যৎ ভেবে, তাদের নিরাপত্তার বিবেচনা করে আমাদের আছে বার্ড ক্লাব, বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন, পাখি সংরক্ষণ কমিটি, পর্যটন কেন্দ্র, পাখির অভয়ারণ্য, পচামারিয়ার মতো পাখি গ্রাম, পাখি শুমারি, সুনামগঞ্জের ১৩১টি হাওর ছাড়াও সারা দেশের অসংখ্য জলাশয় ও বনবাদাড়, সর্বোপরি আছে পাখিকে ভালোবেসে দায়িত্ববান হওয়ার সরল-সবুজ মন। অতঃপর আমাদের কাছে খবর আসেÑ উপকূলীয় ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার দেশের ৪ স্থানে কোস্টার অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে; এ পর্যন্ত হাকালুকিতে বিলুপ্ত ৪ প্রজাতির ৪টি বুলুয়া পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং প্রজননের মাধ্যমে এর বংশ বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে; হাকালুকিতে এবার দেড়শ হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। পাখির পক্ষে, অতিথি পাখির জন্য, নান্দনিকতার প্রয়োজনে এতোসব উদ্যোগ-ভালোবাসার নিশ্চয়ই একটা সুন্দর ফলাফল দাড়াবে। নিরাপদ ও উপযোগী আবাস নিশ্চিত করে, সঠিক আতিথেয়তার কথা বলে নিচু স্বরে আমরা তাই বলতেই পারিÑ প্রিয় অতিথি পাখি, এখানেই থেকে যাও, বরং মাঝে মাঝে বেড়াতে যেও নিজের দেশে...।

By- সোমেশ্বর অলি

No comments:

Post a Comment