-তাহমিন হক ববি, নীলফামারী থেকে :
বিরাট রাজার কন্যা বিন্না। বিন্নার নামে সেই বিন্নাদীঘি আবার কেউ বলেন বিরাট রাজার দীঘি। আর কালের আবর্তের আজকের নীলসাগর। নীলফামারীর এই বিরাট দীঘিতে ভিনদেশী পাখির সমারোহ। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও ছুটে এসেছে শীতের অতিখি পাখিরা। এখন নীলসাগর দীঘিটি এই শীতের হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর। পাখি দেখতে এখানে ছুটে আসছে বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ। বসেছে দর্শনাথর্ীদের মিলনমেলা। শীতের অতিথি পাখিরা কিচিরমিচির ডাক আর পাখা নাচিয়ে উড়াল দিয়ে ফের দীঘির পানিতে ভেসে বেড়ানোর খেলায় মেতে উঠছে। নীলসাগরের উদার উদাস পরিবেশ খুব সহজেই কাছে টানে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের। দীঘির এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন পাখি আর পাখি। পাখিদের জলকেলির দৃশ্য দেখে দুই নয়ন ভরে যায়। এ ছাড়া এলাকাটি পিকনিক স্পট হিসেবেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ সময় শীতের পাখি দেখতে আর বনভোজনে ছুটে আসছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ।
চলে আসুন নীলফামারীর বিন্নাবতীর দীঘি ও দীঘির জলে জলকেলিতে মুখর করে রাখা অতিথি পাখি দেখতে। আপনি আসুন, এই পাখিরা আপনাকে স্বাগত জানাবে।
বিরাট রাজার দীঘি এই নীলসাগরকে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলেছে নীলফামারী জেলা প্রশাসন। এখানে বৃরে সমারোহ ঘটিয়ে মনোমুগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে পিকনিক স্পট। রয়েছে রেস্ট হাউস। দীঘিজুড়ে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পাখিদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয় সেজন্য দীঘি এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বৃরাজির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের ফুলে ফুলে ভরে দেয়া হয়েছে নীলসাগরকে। সীমানা প্রাচীর দিয়ে এই নীলসাগরকে সুরার ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধু অতিথি পাখিদের জন্য। জেল প্রশাসক ফরহাদ হোসেন বললেন পাখিদের অভয়রন্যের পাশাপাশি নীলসাগরের দীঘিতে মাছও চাষ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য বৃরাজির সমারোহ ঘটিয়ে এলাকাটি সবুজে ছেয়ে দেয়া হয়েছে।
নীলসাগরে দর্শনাথর্ীদের জন্য টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৫ টাকা। কেউ যদি এখানকার রেস্ট হাউসে রাতযাপন করতে চান তা হলে আগাম জেলা প্রশাসন হতে বুকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নীলফামারী জেলা শহর হতে ১৫ কিলোমিটার দূরে পাকা সড়ক বেয়ে এই নীলসাগরের অবস্থান। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৫৫ একর জমির ওপর বিরাট রাজার বিন্নাবতী কন্যার এই বিরাট দীঘি। লোকমুখে প্রচলন আছে অষ্টম শতাব্দীর বিরাট রাজার গো খামার ছিল এখানে। শত শত গরম্নকে পানি খাওয়ানোর জন্য বিরাট রাজা এখানে এই দীঘি খনন করেছিলেন। আর রাজার মেয়ে বিন্নাবতীর নামানুসারে এই দীঘির নামকরণ করা হয় বিন্নাদীঘি। কালের আবর্তে বিন্না থেকে এটি বিরাট দীঘি। আর সেই গো খামার থেকে এলাকাটির ইউনিয়নের নাম হয়ে যায় গোড়গ্রাম।
কালের আবর্তে ১৯৮৩ সালে এটির নাম পরিবর্তন ঘটিয়ে রাখা হয় নীলসাগর। এই নীলসাগর নামের সঙ্গে মিলিয়ে এখন সরাসরি নীলফামারী-ঢাকা পথে নিয়মিত চলাচল করছে আনত্মঃনগর ট্রেন নীলসাগর। ট্রেনটি নীলফামারী থেকে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন অভিমুখে ছেড়ে যায়। অপরদিকে ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় নীলফামারী অভিমুখে ছেড়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নীলফামারী পেঁৗছে। এ ছাড়া ঢাকার গাবতলী থেকে নীলফামারীর নীলসাগর যারা দেখতে আসতে চান তারা নাবিল, হানিফ, বাবলু, রোজিনা, শ্যামলী, দ্রম্নতি পরিবহন কোচে আসতে পারেন। মহাখালী থেকেও গাড়ি পাওয়া যায় নাদের ও নীলফামারী পরিবহন।
Source: Daily janakantha, 22th December