Wednesday, December 1, 2010

পাখির কলতানমুখর সিলেটের হাওর

পাখির কলতানমুখর সিলেটের হাওর
- অপূর্ব শর্মা

by সাপ্তাহিক ২০০০ || বৃহস্পতিবার 2 ডিসেম্বর 2010 অগ্রহায়ন ১৪১৭


‘সিলেটের প্রকৃতি ও পরিবেশ হারানো রূপ-লাবণ্য ফিরে পাবে। সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, আবার পাখির কলকাকলিতে ভরে উঠবে চারপাশ! গাছ-গাছালিতে শোনা যাবে কিচিরমিচির’Ñ পরিবেশ ও প্রাণী সংরণবিদ সীতেশ দেবের এই আশাবাদ যেন বাস্তবতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে। বিগত দুই দশকে মানুষের অব্যাহত বন ধ্বংসের কারণে জীবজন্তু ও পাখির সংখ্যা যেখানে ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছিল সেখানে হারিয়ে যেতে বসা জীবজন্তু ও পাখ-পাখালির পুনঃপ্রত্যাবর্তন এমন আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। সিলেট অঞ্চলে বিগত এক বছরে প্রায় বিলুপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব পরিবেশবিদদের মনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান পরিবেশকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় পরিবেশ রা আইনকে আরো কঠোর করা হয়েছে। সরকারের প থেকে কড়াকড়ি আরোপ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্য রার পাশাপাশি পরিবেশও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। সিলেটের বনাঞ্চলে হারিয়ে যেতে বসা বিরল প্রজাতির জীবজন্তুর উপস্থিতিকে প্রকৃতির স্বাভাবিক রূপ ফিরে পাওয়ার লণ হিসাবে দেখছেন পরিবেশবিদরা। আগে বন ও পরিবেশ বিনষ্ট করাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকার মানুষের ধ্যান-ধারণাও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। পরিবেশ ও বন ধ্বংসকে তারা এখন অপরাধ হিসাবেই গণ্য করছে। যার ফলে গভীর অরণ্যে নিরাপদে আবাস গড়ে তুলতে শুরু করেছে প্রাণিকুল। মাঝে মধ্যে এসব প্রাণী বের হয়ে আসছে লোকালয়ে।
১৮ বছর পর গ্রেট বিটার
১৮ বছর পর আবারও বাংলাদেশে দেখা মিলল বিরল প্রাজাতির পাখি গ্রেট বিটারের। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে হাকালুকি হাওরে দেখা মিলেছিল এ প্রজাতির একটি পাখির। এবার দেখা গেল শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরে।
শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের রাধা বিলে জেলেদের মাছ ধরার বড়শিতে গত ১০ নভেম্বর আটকা পড়ে বিরল প্রজাতির বৃহৎ আকৃতির একটি পাখি। জেলেরা পাখিটি নিয়ে আসে শ্রীমঙ্গলের সীতেশ রঞ্জন দেবের চিড়িয়াখানায়। সীতেশ রঞ্জন দেব প্রথমে পাখিটির পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলেও পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এটি একটি বিরল প্রজাতির বক জাতীয় পাখি। এটি দেশি পাখি নয়। তাই এ পাখিকে দেখে কেউ চিনতে পারেনি। এটি একটি নিশাচর পাখি। দিনের বেলা বা মানুষের সামনে এই প্রজাতি খুব কম বের হয়।
বিরল প্রজাতির এ রকম একটি পাখি ধরা পড়ার খবর পেয়ে ঢাকায় অবস্থানরত ইউকে মিডল সেক্স ইউনিভার্সিটির গবেষক পল টমসন পাখিটি দেখতে শ্রীমঙ্গলে ছুটে আসেন। তিনি জানান, এটি সাধারণত ইংল্যান্ড থেকে সাইবেরিয়া ও চীন দেশের ঘন নলখাগড়া বনের পাখি। এদের খাবার অন্য বক জাতীয় পাখির খাবারের মতো।
জানা যায়, পাখিটি এ নিয়ে বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো দেখা গেছে। প্রথম দেখা যায়, ১৯৮৪ সালে শ্রীমঙ্গলের একটি চা বাগানে। দ্বিতীয় বার ১৯৯২ সালে সুনামগঞ্জের একটি হাওরে, তৃতীয় বার ১৯৯৩ সালে কুলাউড়ার হাকালুকি হাওরে। সর্বশেষ দেখা গেল হাইল হাওরে। তবে প্রত্যেকবারই একটির বেশি পাখি দেখা যায়নি। এরা সাধারণত শীত মওসুমে আসে। এ প্রজাতি নিরাপদ পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর। এর শরীরের বাহারি রঙের ছটা যে কাউকে সহজে আকৃষ্ট করে এবং দেখতে বৃহৎ আকৃতির বকের মতো।

কানা কোকা
গত জুলাই মাসে শ্রীমঙ্গলে শিকারিদের কাছে ধরা পড়ে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির দুটি কানা কোকা পাখি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার স্টেশন রোড এলাকায় পাখি শিকারিদের কাছ থেকে বিরল প্রজাতির এ পাখি দুটিকে আটক করে স্থানীয় জনতা। কানা কোকার ইংরেজি নাম ক্রো প্রেসেন্ট। এক সময় বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে এই পাখি দেখা গেলেও এদের আবাসস্থল বাড়ির পাশের ছোটখাটো ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় এ প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে। কানা কোকা প্রায় দাঁড়কাকের মতো কালো এবং পাটকিলে পাখি। ডানা এবং পিঠ পাটকিলে। ঘাড়ের ওপর খাড়া কালো ডোরা দাগযুক্ত। এরা খুব বেশি উড়তে পারে না। মাটিতে হেঁটে বেড়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে ৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে এরা। পোকামাকড়, সরীসৃপ, ইঁদুর, পাখির ছানা এদের খাদ্য।

হাকালুকিতে মদনটাক
সম্প্রতি দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মদনটাক পাখির সন্ধান পেয়েছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাধীন সিডব্লিউবিএমপির পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বশির আহমেদ জানান, মদনটাক মূলত সুন্দরবন অঞ্চলের পাখি। সচরাচর সুন্দরবনে ৮-১০টা পাখির একেকটি দল দেখা যায়। নেড়ে মাথা হওয়ার কারণে নামের সঙ্গে টাক যুক্ত হয়েছে। মদনটাক পাখির বৈজ্ঞানিক নাম ‘খবঢ়ঃড়ঢ়ঃরষড়ং লধাধহরপঁং’। স্থানীয় লোকজন এটাকে ছোলাকাক বা গড়–ড় বলে ডাকেন। সুন্দরবনের পর হাকালুকি হাওর পারের সোনারূপা চা বাগানে এই পাখিটি দেখা গেছে। মূলত জলাশয়ের আশপাশে থেকে এরা সাপ, ব্যাঙ ও পোকামাকড় খায়।
মদনটাক পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। শীতের শুরুতে এরা বড় বড় গাছে বাসা বাঁধে। সুন্দরবনের মতো নিরাপদ বনাঞ্চলে এরা বসবাস করতে পছন্দ করে।

সুন্দরী কালেম
লাল ঠোঁট ও বেগুনি রঙের পাখি। স্থানীয়ভাবে এটি ‘সুন্দরী পাখি’ নামেই পরিচিত। তবে পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, জলচর এ পাখির নাম ‘কালেম’। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা এলাকার হাকালুকি হাওরের জলাশয়ে সম্প্রতি খাবার খুঁজতে দেখা গেছে বিরল প্রজাতির কয়েকটি কালেম পাখি।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে জলচর পাখির শুমারিকালে হাওরের বিভিন্ন এলাকা খুঁজে মাত্র চারটি কালেম পাখির সন্ধান পাওয়া যায়। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের নেতৃত্বে হাকালুকি হাওরে একদিনের জলচর পাখি শুমারিতে প্রায় ৮৫ হাজার পাখির মধ্যে ২০০ কালেম পাখির দেখা পাওয়া গেছে। চলতি বছর এ পাখির সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
সিডব্লিউবিএমপির কুলাউড়া কার্যালয়ের বন্যপ্রাণী সংরণ কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় প্রজাতির কালেম পাখি নিবিড় জঙ্গল পছন্দ করে। দিনের বেলা এরা জলাভূমির ভাসমান লতাপাতা ও কীটপতঙ্গ খায়। জলাভূমির পাশে হিজল, করচ ও বরুণের ঝোপঝাড়ে এরা নিশিবাস করে।’

এক বাড়িতে ১২ হাজার পাখি
একটি বাড়িতেই পাখির সংখ্যা দশ হাজারের বেশি। ভাবতেই অবাক লাগে! কিন্তু বাস্তবতা তাই। রাজনগর উপজেলার হরিপাশা গ্রামের আরক আলীর বাড়িতে এখন পাখিদের কলতান। সারাবছরই হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে তার বাড়ি।
১৯৭২ সালে হরিপাশা গ্রামে ৮৬ শতাংশ জমি ক্রম করে বাড়ি তৈরি করেন আরক আলী। সেই সময় থেকেই তার বাড়িতে দলে দলে আসতে থাকে পাখি। সময়ের হাত ধরে তার বাড়িটি পরিণত হয়েছে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। বছরের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাখি আসে তার বাড়িতে। পাখিরা এখানেই ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফোটায়।
বর্তমানে আরক আলীর বাড়িতে সাদা বক ও কালো পানকৌড়িসহ ২৫-৩০ প্রজাতির ১০ থেকে ১২ হাজার পাখি রয়েছে।
বাড়ির বিভিন্ন প্রজাতির ৩ শতাধিক বড় গাছ এবং ২০-২২টি বাঁশঝাড়ে এসব পাখি নিরাপদ আবাস গড়ে তুলেছে।
আরক আলী জানান, ‘বাড়ির বিভিন্ন গাছের ফলমূল পাখিরাই খেয়ে থাকে। কিছু পাখি সকালবেলা খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। বিকেল হলে তারা ফিরে আসে।’ আরক আলীর প্রতিবেশীদের বাড়িতে বড় বড় গাছ থাকলেও কোনো পাখি ভুলেও সেদিকে যায় না।

হাওরের বুকে অতিথি পাখি
হেমন্তেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসছে সিলেটের হাওরগুলোতে। পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, চলনবিল, হাইল হাওর। শীত বাড়ছে, বাড়ছে অতিথি পাখির সংখ্যা।
প্রতিবছর শীত মওসুমে সুদূর সাইবেরিয়া, উত্তর মেরু, হিমালয় প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে কয়েকশ প্রজাতির অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে এসব হাওরে। শীতের শেষে এরা ফিরে যায় নিজ আবাসভূমে।
দেশের উষ্ণ জলবায়ু, পর্যাপ্ত খাবার আর নিরাপদ আশ্রয় থাকার ফলে এসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে আগস্ট-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্র“য়ারি-এপ্রিল এ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে। পশ্চিম এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার আকাশ পথ ধরে আসে এসব অতিথি পাখি।
চমৎকার বাদামি শরীর আর কালচে, সাদা-কালো ডানা ঝাপটানো এসব অতিথি পাখির কলতানে এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে হাওরগুলো। এসব অতিথি পাখির মধ্যে রয়েছে কালোকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটাইন, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড এমনকি বিলুপ্তপ্রায় প্যালাস ফিশ ঈগল। হাওরের ছোট-বড় জলাশয়ের লতাপাতা আর পদ্ম ফোটা স্বচ্ছ পানিতে জটলা পাকাচ্ছে ভিনদেশি পাখিরা। সারাণ খাবার নিয়ে তাদের ঝগড়া, খুনসুটি, ডুব-সাঁতার, কলকাকলি, কখনোবা অহেতুক জটলা আর ডানা ঝাপটানো। বিরামহীন এক নান্দনিক আবহ এখন হাওরের বুকে।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, এবার হেমন্তের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আগত অতিথি পাখির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। প্রতিদিনই ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। এর মধ্যে রয়েছে মধ্য এশিয়া থেকে আগত ভূতি হাঁস, গুটি ঈগল, সাইবেরিয়া থেকে আগত গিরিয়া হাঁস আর ল্যাঞ্জা হাঁস। এছাড়াও রয়েছে বিপন্ন পাখি পালাসি, কুড়া ঈগল, বালি হাঁস, রাজ সরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পানকৌড়ি, রাঙ্গা বক, বেগুনি কালেম, মেটে মাথা টিটি প্রভৃতি পাখি।

নির্মমতা
নির্মমতাও অব্যাহত আছে হাওরে। অতিথি পাখির আগমন শুরু হতে না হতে নির্দয় শিকারিরাও অপতৎপরতা শুরু করেছে। দূর দেশের অসহনীয় শীত থেকে বাঁচতে এদেশে এসেও প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারে না অনেক পাখি। নির্দয় শিকারির ফাঁদে পড়ে তাদের প্রাণ হারাতে হয়। এবারও শীতের শুরুতেই পাখি বিনাশী তৎপরতায় মেতে উঠেছে শিকারিরা। সম্প্রতি শিকারিরা বিষটোপ দিয়ে হাকালুকি হাওরের গৌড়কুড়ি বিলে ৫ শতাধিক অতিথি পাখি হত্যা করেছে।
হাওরপারের একাধিক বাসিন্দা জানান, একঝাঁক অতিথি পাখি আশ্রয় নিয়েছিল হাকালুকি হাওরের গৌড়কুড়ি বিলে। ঝাঁক বেঁধে তারা খাবার খুঁজছিল জলাশয়ে। বিষটোপ দিয়ে ল্যাঞ্জা হাঁস, পাতি সরালি, ভূতি হাঁস, চখাচখিসহ বিভিন্ন জাতের কমপে পাঁচ শতাধিক পাখি হত্যা করে শিকারিরা। লোকজন দেখে ফেলায় পালিয়ে যাওয়ার আগে বস্তাবন্দি করে বেশকিছু পাখি নিয়ে গেছে তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জায়ফরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম গোবিন্দপুর গ্রাম সংরণ দলের (ভিসিজি) পাহারাদার গয়েন্দ্র বিশ্বাস (৩৫) জানান, গত ১৪ নভেম্বর বিকালে তিনি দেখতে পান গৌড়কুড়ির কাছে শুকনো জায়গায় বেশ কিছু পাখি আধামরা অবস্থায় পড়ে আছে। পশ্চিম গোবিন্দপুর গ্রামের আজাদ মিয়া (২২) ও মজিদ আলী (২৫) পাখিগুলো কুড়িয়ে জবাই করে চটের বস্তায় ভরছিল। এ সময় বাধা দিলে দুই শিকারি তাকে হুমকি-ধমকি দেয়। এক পর্যায়ে শিকারিরা তিনটি বস্তায় পাখিবোঝাই করে চলে যায়। খবর পেয়ে ইউএনও মনীষ চাকমা, থানার ওসি মোঃ হাসানুজ্জামান, বন কর্মকর্তা রতন চন্দ্র দাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিষের ধরন পরীার জন্য তারা মৃত চারটি পাখি নিয়েছেন। ইউএনও মনীষ চাকমা বলেন, ঘটনাটি খুবই নির্মম। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী গোলাম মোস্তফা জানান, জড়িত কয়েকজনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
প্রয়োজন যথাযথ নিরাপত্তা
পাখিরা প্রকৃতিগতভাবে নিরাপদ স্থানকেই আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নেয়। বনাঞ্চল ও হাওরের পরিবেশ যত বেশি নির্ঝঞ্ঝাট করা সম্ভব হবে, তত বেশি দেশি-বিদেশি পাখির আনাগোনা বাড়বে, সেই সঙ্গে আবাস গড়ে তুলবে পাখিরা। তাই প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আইনকে কাগজে-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা বাস্তবায়িত করতে হবে। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, হাকালুকি ও হাইল হাওরে পাখিদের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার ফলে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে অবস্থান করতে শুরু করেছে। প্রতি বছরই অভয়াশ্রমগুলোতে আগত পাখির সংখ্যা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কোস্টাল ওয়েটল্যান্ড অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় হাকালুকি হাওরে জীববৈচিত্র্য সংরণের ফলে এখানে নানা ধরনের বিলুপ্ত প্রজাতির পাখির সমাগম ঘটছে।
শ্রীমঙ্গলের বহুল পরিচিত বাইক্কা বিলে পাখি ও মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। একসময় শুধু শীতকালে এখানে অতিথি পাখি আসত। কয়েক বছর ধরে বাইক্কা বিল পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। বারো মাসই এখানে পাখি দেখা যায়।
হাইল হাওরে পাখি পর্যবেণের জন্য টাওয়ার নির্মাণ করেছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন মাছ প্রকল্প। পাখি পর্যবেণের জন্য নির্মিত পর্যটন টাওয়ারটি ৩ তলাবিশিষ্ট। প্রত্যেক তলাতেই রয়েছে ১টি করে শক্তিশালী বাইনোকুলার। এ টাওয়ার থেকে দাঁড়িয়ে হাওরের জলাভূমির নয়নাভিরাম দৃশ্যও পর্যবেণ করা যায়।
পাখিদের বিরক্ত না করে তাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই এখন জরুরি।

No comments:

Post a Comment