Thursday, December 9, 2010

অতিথি পাখি আসেনি এবার বরিশালের দুর্গা সাগর

অতিথি পাখি আসেনি এবার বরিশালের দুর্গা সাগর

০০ লিটন বাশার, বরিশাল অফিস

অতিথি পাখির ঝাপটায় এখন আর আলোড়িত হয় না দুর্গা সাগরের পানি। এবার অতিথি পাখির দেখা নেই দুর্গাসাগরে, এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের বিলগুলোতেও। এভাবে অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা।
এক সময় নগরীর অদূরবর্তী দুর্গা সাগরে শীত মৌসুম আসার সাথে সাথেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসতো। পাখিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতো দুর্গা সাগর। মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসতেন পর্যটকরা। কিন্তু এক পর্যায়ে অতিথি পাখি আসা কমতে শুরু করলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও হ্রাস পেতে থাকে। দুর্গা সাগরে চলতি শীতে এখনও কোন পাখির দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমে যেসব অতিথি পাখি আসতো তারা রাত কাটাতো এ সাগরে। সূর্য ওঠার সাথে সাথেই এরা বিভিন্ন বিল ও চরাঞ্চলে খাবারের জন্য ছুটে যেত। পড়ন্ত বিকেলে আবার তারা ফিরে আসতো দুর্গা সাগরে। তখন পাখি আসা দেখতে দুর্গা সাগরের তীরে পর্যটকদের ভিড় পড়ে যেত। স্থানীয়রা জানান, দেড় দশক আগে দুর্গা সাগরের কাছাকাছি এলাকা রহমতপুর বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরুর পর থেকে পাখির আনাগোনা কমতে থাকে। এছাড়া সাগরের পাশর্্ববর্তী বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকলেও গাড়ি চালকরা তার তোয়াক্কা করে না। তাদের গাড়ির হর্নের শব্দে অতিথি পাখিরাও পালিয়েছে। পাখি না আসায় পর্যটকশূন্য দুর্গা সাগর তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এখন আর আগের মত কেউ দুর্গা সাগরে বনভোজন করতেও আসে না। এখন শুধু জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে টিকেট ক্রয় করে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মাছ ধরার জন্য কিছু শৌখিন মৎস্য শিকারী সেখানে ভিড় করে। সাগরের চারপাশে যে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছিল তা বনজঙ্গলে ভরে গেছে। লাইটপোস্ট থাকলেও নেই কোন বৈদু্যতিক সংযোগ। ফলে সন্ধ্যার পরই ঘন অন্ধকার ঘিরে ধরে দুর্গা সাগরসহ পুরো মাধবপাশা এলাকা।
পাখি না আসার জন্য অনেক পরিবেশবিদ অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও খাদ্য সংকটকে দায়ী করেছেন। স্থানীয় পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে শব্দ দূষণের পাশাপাশি অতিথি পাখিদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। সেখানে তিন ফসলী জমি এক ফসলিতে রূপ নেয়ায় এ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একই সাথে বার্ড ফ্লুসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়াও অতিথি পাখি না আসার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। দুর্গাসাগর রক্ষায় জেলা প্রশাসন ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
১৭৮০ খৃষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগোনার (বর্তমান বরিশাল বিভাগ) তৎকালীন রাজা শীব নারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর একটি দীঘি খনন করেন। তার মা দুর্গা দেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ হয় দুর্গাসাগর। বরিশাল নগরী থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরবর্তী এই দুর্গাসাগরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বাধীনতার পরপরই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বার বার সে উদ্যোগ হোঁচট খেয়েছে।
Source: Daily Ittefaq, 12th January -2010

No comments:

Post a Comment