Monday, December 6, 2010

ভোলার চরে আসছে অতিথি পাখি ছোটন সাহা

ভোলার চরে আসছে অতিথি পাখি
ছোটন সাহা, by সাপ্তাহিক ২০০০


প্রতিবছরের মতো চলতি শীতেও ভোলায় চরাঞ্চলে অতিথি পাখি আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তবে উপকূলের চরে এদের আশ্রয়ের প্রধান ঠিকানা থাকলেও এরা থাকছে পুরোপুরি অরতি। পুলিশ কিংবা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতায় প্রতিবছর হাজার হাজার অতিথি পাখি শিকারিদের হাতে মারা যাচ্ছে। যে কারণে দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে। চলতি শীত মওসুমেও শিকারি চক্র অতিথি পাখির আগমনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর সুদূর সাইবেরিয়া, নেপাল ও শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশের ভোলায় জলচর ২৮ প্রজাতিসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আশ্রয় নেয়। আশ্রয় নেয়া এসব অতিথি পাখির সংখ্যা আনুমানিক দেড় লাখ। প্রতিবছরের ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এ দুমাস এরা অবস্থান করে আবার ফিরে যায় নিজ আবাসে। কিন্তু প্রতি বছর শিকারিদের কবলে পড়ে যায়। মওসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি হত্যা করা হয়। শিকারিদের বেপরোয়া তা-বে ক্রমেই কমে যাচ্ছে পাখির আগমন।
ভোলায় যেসব চরে অতিথি পাখি দল বেঁধে আশ্রয় নেয় সেগুলোর মধ্যে মাঝের চর, মেদুয়া, রামদাসপুর, মদনপুরা, চর উড়িল সংলগ্ন কেওড়া বন, ঢাল চর, চর কচুয়াখালী, চর কুকরী-মুকরী, চর রামনেওয়াজ, বুড়া গৌড়াঙ্গ চর, চর অহিলউদ্দিন, চর জহিরউদ্দিন, কলাতলীর চর, চর নিজাম ও রামদাসপুর উল্লেখযোগ্য।
এসব চরে রয়েছে বন বিভাগের ৪টি রেঞ্চ ও ৩টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। কিছু সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না থাকায় মরছে পাখি কমছে তাদের আগমন।
ন্যাচার কনজারভেশন কমিটি (এনসিসি) ভোলা জেলা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী জসিম জনি জানান, ভোলার চরাঞ্চলে আশ্রয় নেয়া অতিথি পাখির বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফাই কেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, পাথারি হাঁস, জল কুক্কুট, খয়রা, মান পাখি, ছোট নাগ, কলাই, জলপিপি, বামুনিয়া হাঁস, চিতা টুপি প্রভৃতি অন্যতম। এদের সিংহভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। চরাঞ্চলে দুই ধরনের পাখির আগমন ল করা যায়। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ডাঙ্গায় বা শুকনো স্থানে অথবা গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে ও বিশ্রাম নেয়। শিকারি চক্রের হাতে মূলত পানিতে বসবাসকারী অতিথি পাখি হত্যা হয়ে থাকে। তিনি জানান, প্রতিবছর অতিথি পাখি রক্ষায় জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে পাখিবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত ১০ বছর ধরে তারা এ উৎসব করে আসছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জসিম জনি বলেন, চরাঞ্চলে গাছ কেটে ফেলার কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ায় পাখিদের আবাসস্থল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে চরাঞ্চলে অতিথি পাখির আগমন কমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরিবেশ বিপর্যয়ে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, এগ্রো-কেমিক্যাল প্রয়োগ, খাদ্য সঙ্কট ও পাখির উপযুক্ত পরিবেশ ধ্বংসের ফলে চলাঞ্চলে অতিথি পাখির আগমন কমে গেছে।
এ ব্যাপারে মনপুরা মহিলা কলেজের প্রভাষক মাহাবুবুল আলম শাহিন জানান, বিগত বছরগুলোতে অতিথি পাখি হত্যার কারণে চলতি মওসুমে চরাঞ্চলে অতিথি পাখির আগমন কম হয়েছে। চলতি মওসুমেও পাখি হত্যার উদ্দেশ্যে শিকারিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, মনপুরার চর নিজাম, ঢাল চর ও কলাতলীর চরে উল্লেখযোগ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। কিন্তু পাখি শিকারের বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই কথা জানান ভোলা থানার ওসি মাসুদুজ্জামান।

No comments:

Post a Comment