Friday, December 10, 2010

উড়ে আসে পাখি

উড়ে আসে পাখিওরা আসে দূরদেশ থেকে। জলাশয়গুলো রাঙিয়ে দেয়। দল বেঁধে ঘুরতে, উড়তে, নাচতে পছন্দ করে। সারা দিন বসে থাকা যায় ওদের টানে। এবারের অন্য কোনোখানে তাই অতিথি পাখির বসতি নিয়ে। ছবি : সৈয়দ জাকির হোসেন
হালতি বিল ও চলন বিল নাটোর
নলকাক, সল্লী, নাড়ালসহ আরো অনেক পাখি আসে হালতি ও চলন বিলে। বালিহাঁস তো আছেই। পাখিগুলোর প্রিয় খাবার ছোট মাছ ও শামুক। নভেম্বর মাসের শুরুতে আসে তারা। হালতি বিলের টেঙ্গরগাড়ী, ভেদরগাড়ী ও ডাঙ্গা বিল পাখির জন্য বিখ্যাত। চলন বিলের সিংড়া উপজেলার বেসানীর খাঁড়ি, তিসিগালির বিল ও কাউয়াটিকড়ি এবং গুরুদাসপুর উপজেলার বিলসা, রুহাই প্রভৃতি পাখি দেখার জন্য ভালো। তবে নির্বিচার শিকারের কারণে পাখি কমে আসছে কয়েক বছর ধরে। হালতি বিলে যেতে নাটোর শহরের রসুলের মোড় থেকে পাটুল গ্রামে যেতে হবে রিকশাভ্যানে। এরপর পাটুল নদ পার হয়ে টেঙ্গর বিল। চলন বিলের বেসানীর খাঁড়ি যেতে সিংড়া উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেলে ছয় কিলোমিটার যেতে হয়। রেজাউল করিম রেজা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাভার, ঢাকা
ডেইরি ফার্ম গেট দিয়ে ঢুকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও অমর একুশে পার হলে শহীদ মিনার। আরেকটু পরে প্রশাসনিক ভবন। ভবনের পশ্চিম ও উত্তর দিকের দুটি লেকেই নেমেছে পাখি। পশ্চিম লেকের পাড়ে বেঞ্চ পাতা। দর্শনার্থীরা তাতে বসে পাখি দেখতে পারে। পাখিগুলোর কোনোটির নাম সরালি, কোনোটির নাম গার্গেনি। আরো আছে চটক, পাতারি, মানিকজোড়, খঞ্জনা প্রভৃতি। উত্তরের লেকটি জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল ছুঁয়েছে। পাখিদের কলকাকলিতে এটাও মুখরিত। এখানকার বারোমেসে শাপলা আর পদ্মপাতার ফাঁকে ফাঁকে নাচতে থাকে পাখিরা। তবে পাখি দেখার নীরব লেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছে। এ বছর প্রথম পাখি এসেছে ওখানেই। ঢাকার ফার্মগেট থেকে হানিফ, সুপারসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে জাহাঙ্গীরনগর যাওয়া যায়। ভাড়া ৩৫ টাকা। সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। মেহেদী উল্লাহ
কেন্দুয়া-কোদালিয়া বিল
মোল্লাহাট, বাগেরহাট
বিলটি প্রায় এক লাখ হেক্টরের। খুলনা-ঢাকা মহাসড়ক গেছে বিলের মাঝখান দিয়ে। বিলে এ বছর ডুংকোর, বুরে, কালকুচ, কাম, বালিহাঁসসহ অনেক পাখি এসেছে। বিলের একপাশে সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়ন, ফকিরহাটের মূলঘর-নলধামৌভোগ ও ফলতিতা এলাকা। তবে বিলটি মোল্লাহাট উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। চোরা শিকারিদের তাণ্ডবে পাখিরা স্বস্তিতে নেই। বাখরগঞ্জ, বারাশিয়া ও ডুমুরিয়া বাজারে দেদার অতিথি পাখি বিক্রি হয়।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে আরা, দোলাসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে মাওয়া হয়ে সরাসরি কেন্দুয়া-কোদালিয়া বিলে যাওয়া যায়। ভাড়া ২৫০ টাকা। সুনীল দাস
কাট্টলি বিল রাঙামাটি
পার্বত্য শহর রাঙামাটিকে তিন পাশ থেকে ঘিরে আছে ৩৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই। শীতকালে হ্রদের বুকে রংবেরঙের পাখির মেলা বসে। হ্রদ ধরে কাপ্তাই সদরের দিকে যেতে প্রচুর পাখি দেখা যায়। আবার রাঙামাটি থেকে সুভলং পেরিয়ে কাট্টলি যাওয়ার পর কাট্টলি থেকে ফেরেরমুখ বিশাল হ্রদের অংশটি, যেখানে হ্রদের প্রস্থ প্রায় ১০ কিলোমিটার, সেখানটা পাখির স্বর্গরাজ্য। রাঙামাটি থেকে লংগদুগামী যাত্রীবাহী লঞ্চে কাট্টলি যাওয়া যায়। ভাড়া ৬০ টাকা। সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। ফজলে এলাহী
টাঙ্গুয়ার হাওর তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ
রামকুড়া, এশিয়ান কোয়েলসহ ২০৮ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ কিলোমিটার প্রস্থের মধ্যে ৫১টি বিলের সমন্বয়ে হাওরটি দেশের মাদার ফিশারিজ হিসেবে খ্যাত। হাওরপারের ৮৮টি গ্রামে ৫৬ হাজার মানুষের বাস। রুপাবই, বেরবেরিয়া, পালই, বউন্না, সমসা, রৌয়া, নোহাল, মহিষেরগাথা, হাতিরগাথা ও তেখুনিয়া বিলে অতিথি পাখি বেশি। মাছ ও জলজ উদ্ভিদ পাখিদের আহার। সারা দিন বিলে বেড়িয়ে রাতে হিজল-করচের গাছে বিশ্রাম নেয় এসব পাখি।
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সুনামগঞ্জে যাওয়ার বাস আছে। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে নৌকায় অথবা মোটরসাইকেলে যেতে হয় টাঙ্গুয়ার হাওরে। শহরের তেঘরিয়া সাহেববাড়ির ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করতে হয়। দুই দিনের জন্য ভাড়া তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তাহিরপুর উপজেলার ডাকবাংলোতে থাকা যায়। সাজ্জাদ হোসেন
চর কুকরি-মুকরি ভোলা
২৮ প্রজাতির জলচরসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখি আশ্রয় নেয় ভোলার চরাঞ্চলে। ডিসেম্বর আর জানুয়ারি মাসে বেশি পাখি থাকে। সদর উপজেলার মাঝেরচর, মেদুয়া, রামদাসপুর, মদনপুরা ও চরউড়িলসংলগ্ন কেওড়াবন, চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চরকচুয়াখালী, চরকুকরি-মুকরি, চররামনেওয়াজ, বুড়া গৌরাঙ্গচর, চর-অহিলউদ্দিন, চরজহিরউদ্দিন, কলাতলীর চর, চরনিজাম ও রামদাসপুর পাখির জন্য বিখ্যাত। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের চারটি রেঞ্জ এবং তিনটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র আছে। চরাঞ্চলকে ঘিরে প্রশাসনের নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর শিকারিরা অতিথি পাখির ওপর হামলা চালায়। রাজমণি হাঁস, সরালি, বালিহাঁস, বেয়ারের হাঁস, খোঁপা হাঁস, চা পাখি, গুলিন্দা, চ্যাগা, পিয়ং হাঁস, রাজহাঁস, জিরিয়া, হট-টি-টি প্রভৃতি জলচর অতিথি পাখি মেলে এখানে।
ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যায় ভোলার লঞ্চ ছাড়ে। ভোলার সদরঘাট থেকে রিকশায় বাসস্ট্যান্ডে যেতে ভাড়া লাগে ২০ টাকা। বাসে করে চরফ্যাশন উপজেলায় যেতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। ভাড়া ৬৫ টাকা। সেখান থেকে আরেকটি বাসে কচ্ছপিয়া যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। কচ্ছপিয়া থেকে ট্রলারে করে ওই সব চরে যেতে হয়। শিমুল চৌধুরী
বাইক্কা বিল শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটারের পথ। বাইক্কা বিল দেশের অন্যতম মৎস্য অভয়াশ্রম। হাইল-হাওরে এর অবস্থান। আয়তন ১০০ হেক্টর। পাখিপ্রেমীদের জন্য সম্প্রতি এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দ্বিতল। পাখি ও মাছ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আছে এখানে। অতিথি পাখিরা কোন পথ ধরে আমাদের দেশে আসে, তারও বর্ণনা আছে। টাওয়ারে বসে দূরের পাখি কিংবা জলজ সম্পদ দেখার জন্য আছে বাইনোকুলার ও টেলিস্কোপ। গিরিয়া, ল্যাঞ্জা, মরচেরং ভূতিহাঁসসহ অনেক রকম হাঁস আছে এই বিলে। দলপিপি, নেউপিপি, কালোমাথা কাস্তেচরা আছে।
বিশ্বব্যাপী বিপন্ন পালাসী কুড়া ঈগল এই বিলে ফিরে এসেছে। ঈগলের বিশ্রাম ও বাসা তৈরির জন্য বিলে চারটি উঁচু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
নিলুয়ার বিল দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ
মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত নিলুয়ার বিলে পাখি থাকে। বিলটি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলার মাঝখানে নিলুয়া গ্রামে অবস্থিত।একসময় এটি অনেক বড় ছিল। এখন ভরাট হতে হতে ছোট হয়ে গেছে। ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে সরাসরি নিলুয়ার বিলে যাওয়া যায়। সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা।
সাবি্বরুল ইসলাম সাবু
Source: Dailykalerkantho

No comments:

Post a Comment