Sunday, December 5, 2010

অভিনব ফাঁদে অবাধে পাখি শিকার

অভিনব ফাঁদে অবাধে পাখি শিকার


প্রচলিত আইনে পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ, তা জেনেও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় অভিনব কৌশলে ফাঁদ পেতে প্রকাশ্যে পাখি শিকার চলছে। শিকার করা পাখি স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
একশ্রেণীর অর্থলোভী শিকারি পোষা পাখিকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বক, ঘুঘু, শালিক, কবুতর, মাছরাঙা, রাতচরা, পানকৌড়ি, বালিহাঁস ও সারসসহ নানা জাতের অতিথি পাখি শিকার করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সংঘবদ্ধ শিকারিরা বনবাদাড়, ঝোপঝাড়, জঙ্গল, ফসলি মাঠ ও পুকুরপাড়ে ফাঁদ পাতে। সম্প্রতি কথা হয় কালাই পৌর এলাকার কয়েকজন পাখি শিকারির সঙ্গে। তাঁরা থুপসারা দক্ষিণ মাঠ ও পার্শ্ববর্তী চৈতাল পুকুরপাড়ে বক এবং পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ঘুঘু শিকারের জন্য ফাঁদ পেতেছিলেন। কালাই পুলিশ স্টেশন থেকে কয়েক শ গজ দূরে থুপসারা মাঠ ও চৈতাল পুকুরপাড়ে বক শিকারের জন্য পাতানো ফাঁদগুলো ছিল বিচিত্র। বাঁশের বাতা ও কঞ্চি দিয়ে একটি গোলাকার কাঠামো তৈরি করে তা কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। কাঠামোর ওপর নিমপাতা দিয়ে ঝোপজঙ্গল ও গাছের আদলে তৈরি করা এ ফাঁদের সামনে বাঁশের খুঁটিতে টোপ হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে পোষা বক। বকের পায়ে লাগানো দড়ির একপ্রান্ত ধরে শিকারি কলাপাতা দিয়ে মোড়ানো কাঠামোর ভেতর ঘাপটি মেরে থাকেন। খাবারের সন্ধানে বের হওয়া বক খুঁটিতে বাঁধা পোষা বক দেখে সেখানে বসামাত্র শিকারি খপ করে ধরে ফেলেন।
পাখি শিকারি নুরুন্নবী (৪৫) ও সাবেদ আলী (৫০) জানান, তাঁদের ১০-১২ জনের একটি দল আছে। সবার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নে। তাঁরা এখানে আস্তানা গেড়েছেন থানাসংলগ্ন সরকার রাইস মিল নামের একটি চাতালে। সারা দিন পাখি ধরে তাঁরা চাতালের একটি ঘরে রাখেন। এরপর হাট-বাজারে বিক্রি করেন। প্রতিদিন একেকজন শিকারি গড়ে ১৫টি করে বক ধরেন। প্রতিটি বক ৪০-৫০ টাকায় বাজারে বিক্রি করেন তাঁরা। প্রতিটি ঘুঘু ৬০-৭০, কবুতর ৭০-৮০, রাতচরা ১২০, পানকৌড়ি ৮০ এবং বালিহাঁস ও সারস গড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। নুরুন্নবী ও সাবেদ আলী দুজনই বলেন, ‘পাখি শিকার করা অপরাধ, জানি। কিন্তু বাজারে এসব পাখির প্রচুর চাহিদা এবং ভালো দাম পাওয়া যায় বলে এ কাজ করছি।’ চাতালসংলগ্ন ঘরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে শিকার করা পাখির একটি ‘চিড়িয়াখানা’ গড়ে তোলা হয়েছে।
শিকারিদের চাতালে আশ্রয় দেওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন চাতালমালিক খায়রুল আনাম। তিনি বলেন, ‘চাতালে কাজ করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ১০-১২ জন শ্রমিক ফাঁদ পেতে এভাবে পাখি শিকার করছে। নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা আমলে নেয় না।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ফাঁদ পেতে নিরীহ পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ।’ জয়পুরহাট মহিপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মো. আতাউল গণি বলেন, ‘এমনিতেই পাখির মতো প্রাণিকুল আজ বিপন্ন হওয়ার পথে। প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখপাখালি। তার ওপর কালাইয়ে যেভাবে অবাধে নিরীহ পাখি নিধন করা হচ্ছে, তাতে প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।’

No comments:

Post a Comment